বিশ্বব্যাপী মানবজাতির সামনে সবচেয়ে বড় সংকট এখন জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। ক্রমেই বেশি করে ডুবছে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল। বাড়ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা। এই অবস্থায় বৈশ্বিক উদ্যোগ আরো জোরদার করা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে বৈশ্বিক উদ্যোগ যেমন কম, সেসবের বাস্তবায়ন আরো হতাশাজনক। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। সেই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি।
তিনি শুক্রবার বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৈশ্বিক উদ্যোগে নতুন করে গতি সঞ্চারিত হবে। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ুবিষয়ক ভার্চুয়াল লিডার্স সম্মেলনে আমন্ত্রণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান। আশা করা হচ্ছে, ৪০টিরও বেশি দেশ এই সম্মেলনে অংশ নেবে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরের সময় জন কেরি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। এরপর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জন কেরি। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে খোলামেলা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা করা হয়েছে এবং এখন মিয়ানমারের জনগণের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা বর্তমান বিশ্বে অন্যতম বড় নৈতিক চ্যালেঞ্জ।
বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রশংসা করে জন কেরি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি যে অসাধারণ মানবতা প্রদর্শন করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে বিশ্বসম্প্রদায়ের উদ্যোগ আরো বাড়ানো উচিত।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জন কেরি বলেন, ‘আমি নিজে নেপিডো গিয়েছি এবং জেনারেলদের সঙ্গে দেখা করেছি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি এমন একটি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে, যা সর্বজনীন মান এবং জনগণ ও রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তারা আমাদের এ প্রচেষ্টাকে সম্মান করেনি।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন রোহিঙ্গা ইস্যুতে খুবই সজাগ। সংকট সমাধানে সম্ভাব্য সব কিছুই করা হবে।
প্যারিস সম্মেলনে বড় অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রতি পূরণ হয়েছে খুব সামান্যই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে আমরাও আশা করছি, প্যারিস সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসা নড়বড়ে বৈশ্বিক উদ্যোগকে জোরদার করবে। পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো তাদের জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় প্রকৃত অর্থেই কিছু সহযোগিতা পাবে।