বাংলাদেশে বেকার তরুণের সংখ্যা বেশি। বেশির ভাগের কারিগরি বা শিক্ষাগত যোগ্যতা কম। অনেকের বৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার যোগ্যতাও কম। তারাই বেশি করে মানব পাচার কারীদের শিকার হয়।
ভালো বেতনের চাকরি, উন্নতমানের থাকা-খাওয়াসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দিয়ে তাদের জালে আটকায়। তারপর বিদেশে নিয়ে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। কিংবা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাঠানো হয়। অনেকেরই সলিলসমাধি হয়।যারা পৌঁছে, তারাও আরেক অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি হয়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে ক্রমেই বেশি করে তরুণ ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে। খবরে বলা হয়, চলতি বছর সমুদ্রপথে যারা ইতালিতে প্রবেশ করেছে, সেই অভিবাসীদের সংখ্যার বিচারে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এই তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে চতুর্থ স্থানে।তালিকার শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকার দেশ গিনি, দ্বিতীয় অবস্থানে তিউনিশিয়া এবং তৃতীয় স্থানে আইভরি কোস্ট।প্রায় প্রতিদিনই মানবপাচারের নানা ধরনের খবর আসে গণমাধ্যমে। বৃহস্পতিবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, লিবিয়ার একটি বন্দিশিবির থেকে বুধবার দেশে ফিরেছেন আরো ১৪৫ জন বাংলাদেশি।তাঁরা সবাই অবৈধভাবে লিবিয়ায় গিয়েছিলেন। দেশটির রাজধানী ত্রিপোলির বেনগাজির একটি বন্দিশিবিরে তাঁরা আটক ছিলেন।আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিবিয়ায় আরো যাঁরা আটকে আছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর আগে ২৮ নভেম্বর লিবিয়ার একটি বন্দিশিবির থেকে ১৪৩ জন এবং ৩০ নভেম্বর ১১০ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।এর আগে ভূমধ্যসাগরে অনেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। মরুভূমিতে কিংবা বন্দিশিবিরেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশিদের গণকবর পাওয়া গেছে। প্রতিনিয়ত মুক্তিপণ আদায়ের খবর পাওয়া যায়। এত কিছুর পরও এই ভয়ংকর মানবপাচার রোধ করা যাচ্ছে না কেন? জানা যায়, সারা দেশে পাচারকারীদের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে।তাদের শত শত এজেন্ট রয়েছে। তারা বেকার যুবকদের টার্গেট করে নানা ধরনের মিথ্যা প্রলোভন দিতে থাকে। একসময় অনেক তরুণ তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। সাধারণত ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দিয়ে লিবিয়ায় নেওয়া হয়।তার পরই শুরু হয় নানা অনাচার-অত্যাচার। এসব অত্যাচার-নির্যাতন, ভূমধ্যসাগরের মৃত্যুঝুঁকি উপেক্ষা করে একসময় কিছু তরুণ ইউরোপে পা রাখতে পারলেও পুলিশের তাড়া খেতে হয়, কারাবাস করতে হয়, এমনকি অভিবাসনবিরোধী মানুষের হাতে নির্যাতিত হতে হয়।মানবপাচারের শিকার হওয়া থেকে আমাদের তরুণদের রক্ষা করতে হবে। পাচারকারী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চাই, বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার দ্রুত নির্মূল হোক।