করোনা মহামারি তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। লকডাউনে থাকতে হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, অনুষ্ঠানাদি না করা, বাইরে বেরোলেই মাস্ক পরে থাকা এবং আরো অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছে। অবশেষে গত কয়েক মাস কিংবা বছরখানেক আমরা অনেকটাই শঙ্কামুক্ত ছিলাম।
অনেকেই মাস্ক পরা ছেড়ে দিয়েছে। সামাজিক মেলামেশা অনেকটা অবাধেই চলছে। কিন্তু এরই মধ্যে আবার একটা শঙ্কা জাগিয়েছে কভিড-১৯ ভাইরাসের আরেকটি নতুন উপধরন। জেএন-১ নামের এই উপধরনটি প্রথম ধরা পড়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে।
অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে সক্ষম উপধরনটি এরই মধ্যে অর্ধশত দেশে শনাক্ত হয়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও এটি ভালোভাবে ছড়িয়েছে। ছড়িয়েছে বাংলাদেশেও। মাসখানেক আগেও যেখানে পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ছিল ১ শতাংশের নিচে, সেখানে গত শুক্রবার প্রাপ্ত পরীক্ষায় আক্রান্তের হার পাওয়া গেছে ৫.১২ শতাংশ।শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য জেএন-১ উপধরনই দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার এমন বিস্তৃতি জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তাই নতুন করে টিকার বুস্টার ডোজ প্রদানের আয়োজন চলছে।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেকই ঘটছে নতুন এই উপধরনের মাধ্যমে।এটি দ্রুত ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটিকে কড়া নজরে রেখেছে। এর লক্ষণগুলো আগের ধরনগুলোর মতোই, যেমন—জ্বর, সর্দিকাশি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, ক্লান্তি ইত্যাদি। এ ছাড়া গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, ডায়রিয়া ও বিভ্রান্তি বোধ করা।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার যেহেতু পাঁচের ওপরে চলে গেছে, তাই মাস্ক পরাসহ ন্যূনতম সাবধানতাগুলো মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে যাঁরা চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত বা হাসপাতালে কাজ করেন, যাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি, দীর্ঘদিনের পুরনো রোগ আছে, তাঁদের মাস্ক পরা অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া যারা এখনো চতুর্থ ডোজের টিকা নেয়নি, তাদের যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ কভিডের টিকা নতুন এই উপধরনের ক্ষেত্রেও কাজ করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।কভিডের নতুন উপধরন যেসব দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, বাংলাদেশেও উপধরনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই জনসমাগমের স্থানগুলোতে মাস্ক পরাসহ সাবধানতামূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় শক্তভাবে চালু করা প্রয়োজন। এর মধ্যে শুরু হয়েছে বাণিজ্য মেলা। সেখানেও মাস্ক পরার পাশাপাশি হাত ধোওয়া বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, আগের মতোই আমরা নতুন সংক্রমণ ঠেকাতেও সফল হব।