রপ্তানি বাণিজ্য উৎসাহিত করতে সরকার রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে। বর্তমানে ৩৮টি পণ্য রপ্তানিতে ১ থেকে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর এ খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। সেই বিশেষ প্রণোদনায় ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতি চিহ্নিত হয়েছে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সিভিল অডিট অধিদপ্তরের ২০২১ সালের অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্টে।
অন্তত ২৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, জালিয়াতি ও কারসাজি করে ৭৫০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। এর বাইরে কর এবং পদ্ধতিগত অনিয়ম হয়েছে। সরকারের নগদ সহায়তা ঘরে তুলতে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
অনেক উৎপাদিত পণ্যের শতভাগ বিদেশে রপ্তানি না করেই শতভাগ রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিবছর সরকারের নগদ সহায়তার অর্থ তুলে নিচ্ছে। দেশীয় উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজস্ব কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে পণ্য রপ্তানির কথা থাকলেও সে শর্ত মানা হচ্ছে না। আইনের ফাঁকফোকর থাকায় পদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে বিশৃঙ্খলা।
অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি দেখিয়ে এমনকি পণ্য রপ্তানি না করেও নগদ সহায়তা তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার কম রপ্তানি করে অধিক পণ্যের ওপর বা উৎপাদন খরচ বেশি দেখিয়ে নগদ সহায়তা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এক পণ্যের নিবন্ধন নিয়ে এবং ট্রেড লাইসেন্স করে নির্ধারিত পণ্যের বাইরে অন্য পণ্য উৎপাদন এবং তা রপ্তানি করে, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অগ্রাহ্য করে সরকারের নগদ সহায়তার কয়েক শ কোটি টাকা ঘরে তোলার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অগ্রাহ্য করে চীন, থাইল্যান্ড ও লাওসে রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য এসেছে হংকং ও তাইওয়ান থেকে।
নগদ সহায়তার ওপর সিভিল অডিট অধিদপ্তরের অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্ট পর্যালোচনায় যেসব অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
কারণ দেশ থেকে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমদানি-রপ্তানি কিছুই হয়নি কিন্তু পেমেন্ট হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।