যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহনের চাপ অত্যধিক বেড়ে গেছে। সেই চাপ কমাতে সরকার গাইবান্ধার বালাসিঘাট ও জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদে আবার ফেরি চলাচল শুরু করার উদ্যোগ নেয়। ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে বিশাল দুটি প্রবেশদ্বার, বাস টার্মিনাল, টোল আদায়ের বুথ, পুলিশ ব্যারাক, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, বিশ্রামাগার, রেস্তোরাঁসহ আরো অনেক কিছু।
ফেরি সার্ভিস আবার চালু হবে এই আশায় বুক বেঁধেছিল উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার মানুষ। কিন্তু তাদের হতাশ হতে হলো। ফেরি চলাচল শুরু হয়নি। এপ্রিলে লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হলেও গত সোমবার তা-ও বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ নদীতে লঞ্চ চলার মতো গভীরতাও নেই। জানা যায়, বিআইডাব্লিউটিএ গঠিত একটি কারিগরি কমিটি এখন বলছে, এই রুটটি ফেরি চলাচলের উপযোগী নয়। তাহলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হলো কেন? প্রকল্প গ্রহণের আগে কি কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি?
প্রায় শত বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল। তার পর থেকে এই ফেরিপথটিই ছিল রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও তথা পুরো উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধানতম পথ।
দুই যুগ আগে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এই ফেরিপথের গুরুত্ব কমতে থাকে এবং ২০১০ সালে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন খননকাজ না হওয়ায় ফেরিপথের বিভিন্ন জায়গায় চর পড়ে যায়। পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। এ কারণে এখন এই পথে বর্ষায়ও লঞ্চ চলতে পারে না। ফেরিপথ সচল না করে বিপুল অর্থ ব্যয়ে এমন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরির অর্থ কি? প্রায় ১০০ বছর ধরে যে ফেরিপথ চলাচলের উপযোগী ছিল, তা এখন ফেরি চলাচলের ‘উপযোগী নয়’ কেন?
প্রতিবছরের মতো এ বছরও জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারও প্রধান কারণ ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা সংকট। নদীর গভীরতা কম থাকায় উজান থেকে নেমে আসা পানি নদী দিয়ে যেতে না পেরে দুই কূল ভাসিয়ে যায়।
সেদিক থেকে উপযুক্ত গভীরতায় ব্রহ্মপুত্রের খনন এবং স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। আর তাহলেই সম্ভব বালাসি-বাহাদুরাবাদ ফেরি চলাচল আবার চালুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সুগম করা।