প্রায় প্রতি বর্ষায়ই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। ২০১৭ সালে পাহাড়ধসে বৃহত্তর চট্টগ্রামে এক দিনেই মারা গিয়েছিল ১৪২ জন। এদের মধ্যে ১২০ জনই ছিল রাঙামাটির। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে মাটিচাপায় মারা গিয়েছিলেন পাঁঁচ সেনা সদস্যও। এর আগে ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম শহরে পাহাড়ধসে মৃত্যু হয়েছিল ১২৭ জনের। এভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিবছরই। পরিবেশবিদরা এ জন্য নির্বিচারে পাহাড় কাটাকেই দায়ী করছেন। দেশের প্রচলিত আইনেও পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ; কিন্তু কে শোনে কার কথা। প্রতিদিনই পাহাড় কাটা হচ্ছে। শত শত ট্রাক সে মাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সেসব দেখেও না দেখার ভান করছে। পরিবেশবিদদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যেই বৃহত্তর চট্টগ্রাম পাহাড়শূন্য হয়ে যাবে।
প্রতিবছর বর্ষা এলে প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসে। পাহাড়ের পাদদেশে থাকা দরিদ্র লোকজনকে সরে যেতে বলে। পাহাড় কাটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে। বিদ্যমান আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করা হয়। বড় ধরনের ধসের ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। সেসব তদন্ত কমিটি নানা ধরনের সুপারিশও করে। কিন্তু কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয় না। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, তিন পার্বত্য জেলার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়ও পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে লোক-দেখানো দু-একটা অভিযান চালালেও পাহাড় কাটার কলেবর না কমে দিন দিন বেড়েই চলেছে।
শত শত ট্রাক এসব মাটি পরিবহন করলেও তা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে স্পষ্ট বলা আছে, সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কোনোটাই কাটা যাবে না। জাতীয় প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় কাটার যে বিধান রয়েছে তারও অপব্যবহার হচ্ছে। দেখা যায়, এসব কাজে নিয়োজিত ঠিকাদাররা প্রয়োজন ছাড়াই অতিরিক্ত পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে। শুধু পাহাড় কাটা নয়, দেদার পাহাড়ের গাছও কাটা হচ্ছে। আর কাটা গাছের বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। অথচ আইনে পাহাড় বা টিলার মাটি ব্যবহার বা কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রায় কেউই মানছে না এসব আইন।
তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। ইটভাটাগুলোর লাইসেন্স নবায়নের আগে জেলা প্রশাসনকে পাহাড় বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো থেকে ইটভাটার দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ভাটা আইনের ব্যত্যয় করলে লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। বরাবরই দেখা গেছে, এসব কাজে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অনেকে জড়িত থাকেন। তাই পাহাড় রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় দেওয়াটাও জরুরি। বনাঞ্চলের পাশ থেকে করাতকলগুলোও সরাতে হবে। আমরা চাই, পাহাড় ও বন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।