স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। বাংলাদেশ যাতে আর্থিকভাবে সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে, সে জন্য নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর আবার পাট ও পাটশিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। আর তার ফলও ফলতে থাকে। বাংলাদেশেই প্রথম পাটের জিনোম আবিষ্কৃত হয়। পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ প্রণয়নের মাধ্যমে বেশ কিছু পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। গত বছরও পাটের দাম পেয়ে কৃষক আশাবাদী হয়ে পাট চাষে আগ্রহী হয়েছিলেন। কিন্তু এবার পাট নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে দেশের কৃষককে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ পাটের দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বছর যতই সামনে যাচ্ছে ততই কমে আসছে পাটের আবাদ। বরগুনার আমতলী উপজেলায় চলতি বছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চাষ হয়েছে আট হেক্টর জমিতে। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চলতি আবাদ মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় হঠাৎ পাটের দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। যেখানে ঈদের আগে প্রতি মণ চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে বর্তমানে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলার পাট চাষিরা। এ ছাড়া সরকারি পাট ক্রয়কেন্দ্র না থাকা এবং সরকারি মূল্য নির্ধারিত না থাকায় দালাল-ফড়িয়াদের কাছে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে।
পাট বিশেষভাবে বাংলাদেশের উপযোগী ফসল। বাজার সম্প্রসারণ করা গেলে দেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য ভালো দাম পাবে। উৎসাহিত হবেন কৃষক। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায়ই বাংলাদেশের পাট গবেষণা আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে। পাটের জিনোম আবিষ্কৃত হয়েছে। রোগমুক্ত ও অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো মানের পাট উৎপাদনকারী দেশ হলেও শুধু কার্যকর গবেষণা ও ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়ছে। কাজেই গবেষণা ও ব্র্যান্ডিংয়ে আমাদের অধিক নজর দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে পাটের বহুমুখী ব্যবহার।
সরকার পাটকল আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বে পাটের চাহিদা মূল্যায়ন, নতুন চাহিদা সৃষ্টি এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করাও জরুরি। আমরা চাই, পাটপণ্যের বহুমুখীকরণের প্রতি আরো বেশি দৃষ্টি দেওয়া হোক এবং বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হোক।