ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধন করার উদ্দেশ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তৎপরতাগুলোর কার্যকারিতা যা-ই হোক, নাম বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। যেমন একটি তৎপরতার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান’। কঠোরতা বোঝাতে সেটাকে ‘চিরুনি অভিযান’ও বলা হয়। এ বিশেষ অভিযানের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অংশটি হলো বাসাবাড়ি, বিভিন্ন রকমের স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন ইত্যাদিতে সদলবলে পরিদর্শন করে লোকজনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এ মুহূর্তে এ চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। সংস্থাটির কর্মীরা অভিযানের চতুর্থ দিন গত বুধবার ডিএনসিসির আওতাভুক্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৩১ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।
যেসব মানুষ তাঁদের বাসাবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনার আশপাশ অপরিচ্ছন্ন রেখে এডিস মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হতে দেন, তাঁদের শাস্তি হিসেবে জরিমানা আদায় করাই আইন। কিন্তু আসলে তার কোনো সুফল ফলছে কি না, সেটাও দেখতে হয়। হুটহাট এ ধরনের অভিযান চালিয়ে অনেক জরিমানা আদায় করা হয়েছে, কিন্তু তার সুফল সামান্যই মিলেছে। তার প্রমাণ ডিএনসিসির কর্মীরা যেদিনের অভিযানে ওই অঙ্কের জরিমানা আদায় করছেন, সেই অভিযানেই তাঁরা দেখতে পেয়েছেন ৭ হাজার ৬০৭টি স্থানে এডিস মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে।
আর এটা বড়ই আশ্চর্যের কথা যে পরিচ্ছন্নতা বা জরিমানা আদায়ের চিরুনি অভিযান চালাতে গিয়ে প্রতিদিনের সকালবেলার লার্ভিসাইডিং বা মশার লার্ভা মারার ওষুধ ছিটানোর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডিএনসিসির দুটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজার ও ওষুধ ছিটানোর কর্মীদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সকালের লার্ভিসাইডিং বন্ধ রাখা হয়েছে অঞ্চল-৬-এর মশক সুপারভাইজার লুৎফর রহমানের নির্দেশে। কিন্তু লুৎফর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি এ রকম কোনো নির্দেশ দেননি। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, চিরুনি অভিযানের কারণে সকালের নিয়মিত লার্ভিসাইডিং বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবে অনেক জায়গায় তা বন্ধ রাখা হয়েছে। মশার ওষুধ ছিটানোর কর্মীরা জেনেছেন যে সকালবেলা তাঁদের ডিউটি নেই।
আসলে কে নির্দেশ দিয়েছিলেন কিংবা কী কারণে সকালের নিয়মিত লার্ভিসাইডিং বন্ধ করা হয়েছে—এ বিষয়ে ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খোঁজ নেওয়া উচিত। পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও মশার ওষুধ ছিটানো—উভয় কাজের উদ্দেশ্যই যেহেতু মশা নিয়ন্ত্রণ, তাই একই সঙ্গে দুটো কাজই নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। কোনোটির কারণেই কোনোটি বন্ধ রাখার সুযোগ নেই, প্রয়োজন তো নেই–ই।