অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশে সমৃদ্ধ আগামী দিনের যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল একদিন, অনেক বাধা ও বিপত্তি পেরিয়ে সেই স্বপ্ন সত্যি হতে এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, সামর্থ্যের ঘাটতি, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্ব অর্থনীতির মোড়লের পিছিয়ে যাওয়া কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। গত শুক্রবার পদ্মা সেতুতে বসানো হলো ৪০তম স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ছয় কিলোমিটার। আর একটি স্প্যান বসলেই যুক্ত হবে সেতুর এপার-ওপার। জানা গেছে, আগামী ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের আগেই শেষ স্প্যানটি বসাতে চাইছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবারও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নিয়োগ করা হয় পদ্মা সেতুর ডিজাইন কনসালট্যান্ট। ২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঘটনাবহুল সময় পেরিয়ে যায়। পদ্মা সেতুর মূল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক নানা টালবাহানার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি স্থগিত করে, পরে চুক্তি বাতিল করে দেয়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ৬.১৫ কিলোমিটারের সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। এটাই হবে দেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচের তলায় ট্রেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন এই সেতু চালু হলে তার হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। পদ্মা সেতু যে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের সামর্থ্য ও যোগ্যতার একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের গতিও ত্বরান্বিত হবে।
পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হোক নতুন পালক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন