দেশের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু একটি দুঃসাহসী স্বপ্নের নাম। পরাক্রমশালী বিশ্বব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘নিজেদের টাকায়ই আমরা পদ্মা সেতু গড়ব।’ গত বৃহস্পতিবার সেতুর রেলপথের গার্ডার বা স্টেনজার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে এ মাসের মধ্যেই শেষ হবে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেতুর সড়কপথের স্ল্যাব বসানোর কাজও শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে গ্যাসের লাইন স্থাপনের প্রক্রিয়াও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
আয়তন ও নির্মাণব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এটাই হবে দেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচের তলায় চলবে ট্রেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন এই সেতু চালু হলে তার হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। এই সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রথম কোনো সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন পাল্টে যাবে।
স্বপ্নের এই সেতুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ বাংলার উদ্যোক্তাদের ভেতরে এরই মধ্যে এক ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আস্থার জায়গা তৈরি হয়ে গেছে। এই সেতু ঘিরে শিপবিল্ডিং, পর্যটন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা খাতের বড় ধরনের বিকাশ ঘটবে। ওই অঞ্চলে গড়ে উঠবে পর্যটনকেন্দ্র। ঢাকা থেকে সরাসরি সেখানে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যাবে। পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমবে। ফলে বাড়বে বাণিজ্যিক গতি। বিনিয়োগকারীরা এখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাবেন। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাড়বে বাণিজ্যিক গতি। বিনিয়োগকারীরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাবেন।
লক্ষ্যে স্থির, বিপদে অবিচল থাকলে পাহাড়সম বাধাও যে ডিঙানো যায় তার বড় নজির পদ্মা সেতু প্রকল্প। নির্মীয়মাণ এই সেতু নিয়ে দেশ-বিদেশে জল ঘোলা কম হয়নি। কম পড়েনি রাজনৈতিক খড়্গের আঘাত। অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশে সমৃদ্ধ এক আগামীর স্বপ্ন নিরন্তর শুধু আমরা দেখি না; বাস্তবায়নেও দক্ষ হয়ে উঠেছি। পদ্মা সেতু তারই দৃশ্যমান প্রমাণ। সুন্দর আগামী দিনের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু সেই স্বপ্ন পূরণের একটি পথরেখা রচনা করেছে। আমাদের স্বপ্ন পূরণে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় আমরা।