শুধু বাংলাদেশ নয়, মূল্যস্ফীতি আজ সারা বিশ্বের জন্যই বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই সংকটের মূল কারণ। যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দাম হঠাৎ করে অনেকখানি বেড়ে গেছে। খাদ্যসংকট আর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলেও মূল্যস্ফীতির চাপে পড়তে হয়েছে অনেক দেশের নাগরিকদের। গবেষণা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশেও সাধারণ মানুষ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করছে।
যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সির ভোক্তা জরিপে দেখা গেছে, আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় দেশটির মানুষ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে। তবে এ পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে মূল্যবৃদ্ধিই। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে মানুষের মূল প্রবণতা হলো তারা কম খাচ্ছে; বাড়িতেই বেশি রান্না করছে, বিশেষ অফার পেলে খাবার কিনছে এবং সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প খাবারের দিকে ঝোঁকা হচ্ছে। গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টার পরিসংখ্যান বলছে, কানাডার নাগরিকরা তাদের অর্থ ব্যয়ের ধরনে পরিবর্তন এনেছে। তারা অর্থ বাঁচাতে মাংসসহ সব ধরনের খাদ্যগ্রহণ কমিয়েছে।
বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাপে আছে সাধারণ মানুষ। একটি বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান দেশের আট বিভাগে ৯ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত এক খানা জরিপ চালিয়ে যে তথ্য পেয়েছে তাতে দেখা গেছে, ছয় মাসের ব্যবধানে তাদের ব্যয় ও খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে।
নিম্ন আয়ের ৯০ শতাংশের বেশি পরিবার তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে। নিম্ন আয়ের অনেক পরিবার মাঝেমধ্যে এক বেলা কম খেয়ে থাকছে। অনেক নিম্ন আয়ের পরিবারকে সঞ্চয় ভেঙে ও ঋণ করে চলতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমিয়েছে বলেও জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈশ্বিক ও জাতীয় বিভিন্ন বিষয়ে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের নীতি সহায়তার ক্ষেত্র আরো বাড়ানো গেলে সেটা সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে।