শিক্ষা খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা নিয়ে এ পর্যন্ত গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়েছে। স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্তি, নিয়োগ, বদলি, পাঠদানের অনুমতিসহ বিভিন্ন কাজে নিয়মবহির্ভূত মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়াটা নাকি এক ধরনের রেওয়াজ এখন! শিক্ষাভবন নামে পরিচিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বা মাউশি ভবনটি ঘুষ-দুর্নীতির সবচেয়ে বড় কেন্দ্র বলেও পরিচিতি পেয়েছে।
এবার শিক্ষা খাতে অন্য রকম একটি বিষয় সামনে এলো। গত মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকারি বিধি না মেনে আয়-ব্যয়, যন্ত্রপাতি-যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত, জনবল কাঠামো, বিভিন্ন আদায়-প্রাপ্তিসহ আর্থিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ৫০টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ৩২ কোটি টাকার অনিয়ম করেছে।
অনিয়মগুলো ঘটেছে নানাভাবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরীক্ষা তহবিলের অর্থ নিয়মবহির্ভূতভাবে খরচ করেছে। লোক-দেখানো ‘কোটেশনের’ মাধ্যমে টাকা ব্যয় করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের দেওয়া সম্মানী ও বিভিন্ন বিল থেকে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর কেটে রাখা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে যেসব ঠিকাদার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করেছেন তাঁদের বিল থেকে আয়কর কাটা হয়নি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টিউশন ফি, ভর্তি ফিসহ কয়েক ধরনের ফি আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি সেই টাকা।
প্রাপ্য না হয়েও ঢাকার বাইরে সংযুক্ত শিক্ষকদের অনেকে বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত হারে বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। বিভিন্ন কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের অগ্রিম বাবদ টাকা দেওয়া হলেও তা সমন্বয় করা হয়নি। উপবৃত্তির অবিলীকৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা এক খাত থেকে আরেক খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া গাড়ি কেনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা করা অর্থ বিভিন্ন তহবিলে স্থানান্তর করা হয়নি।
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান টাকা ব্যাংকে জমা না রেখে অন্য কোনো খাত দেখিয়ে ব্যয় করেছে। অনুমোদন ছাড়া মাস্টাররোলে কর্মী নিয়োগ করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী খাতভিত্তিক ক্যাশ বই তৈরি করে পৃথক ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এ ধরনের অনিয়ম ঘটল কিভাবে? নিয়মিত নিরীক্ষা না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এসব অনিয়ম দূর করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। যেখান থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় সেই জায়গাটিকে পরিশুদ্ধ করা গেলে সব অনিয়ম দূর করা সম্ভব হবে।