বাজারে স্বস্তি নেই। পুরনো সেই কথাই নতুন করে লিখতে হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চাল, ডাল, তেল ও ডিমের মতো চিনিও দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আটা ও ময়দার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে।
মাছের বাজারেও ক্রেতাদের কিছুটা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। শীতের আগাম সবজি বাজারে এলেও দাম বাড়তি। কিন্তু চিনির দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাজারে এখন খোলা চিনি ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও চিনির দাম ছিল ৯৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিনি উৎপাদনকারী কম্পানিগুলো বাজারে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
এ কারণেই এখন চিনির দাম বাড়ছে। মিল থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কারণেই বাজারে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিমত। অন্যদিকে চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীদের ভাষ্য, এলসি খোলার জটিলতায় আমদানি কমে গেছে, ডলারের উচ্চমূল্যে বেড়েছে আমদানি খরচ। আবার গ্যাস সংকটে কমেছে উৎপাদন। সব মিলিয়েই বাজারে টান পড়েছে।
মূল্যস্ফীতিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ থেকে দ্রুতই মুক্তির কোনো পথও খোলা নেই। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। শুধু বৈশ্বিক পণ্যই নয়, দেশে যেসব পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলোর দামও ঊর্ধ্বমুখী, যা মানুষের ওপর বোঝা সৃষ্টি করছে।
গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। আইএমএফ বলছে, গত দুই বছর মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৬ শতাংশ। চলতি বছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি দাঁড়াতে পারে ৬.১ শতাংশ। ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। একচেটিয়া বা কয়েকজন মিলে বাজারটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
আমদানি বা দেশীয় পণ্য উভয় ক্ষেত্রে একটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একচেটিয়া বাজারব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা আইন সংশোধন করে এবং সেই আইন প্রয়োগ করে তদারকি বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারকে মূল ভূমিকা নিতে হবে।