করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন আবারও তা বাড়তে পারে। এখন করোনার চেয়েও বড় বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। প্রতিদিন কমবেশি এক হাজার করে রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের।
করোনা ও ডেঙ্গু নিয়ে মানুষ যখন ভীতিকর দিন কাটাচ্ছে, তখনই হানা দিয়েছে আরেক বিপদ। সেই বিপদের নাম ডায়রিয়া। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতিদিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। ২৭ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহে সেখানে রোগী ভর্তি হয়েছে সাত হাজার ৭৬৮ জন। শুধু ঢাকা মহানগরীতে নয়, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায়ও ব্যাপক আকারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে।
ডায়রিয়া প্রধানত ছড়ায় দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় শুষ্ক মৌসুম ও খুব গরমের সময়। মানুষ এসব সময়ে তৃষ্ণা মেটাতে যেখানে-সেখানে পানি পান করে। পানি বিশুদ্ধ কি না তা যাচাইও করে না। যেখানে-সেখানে খাবার গ্রহণ, খোলা খাবার গ্রহণ, হাত ঠিকমতো না ধুয়ে খাওয়াসহ আরো অনেক কারণে ডায়রিয়া হতে পারে।
তীব্র শীতের সময় কোল্ড ডায়রিয়াও হতে দেখা যায়। কিন্তু নভেম্বর মাসে এভাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়া কিছুটা অস্বাভাবিকই মনে হচ্ছে। চিকিৎসকদের ধারণা, করোনা কমায় মানুষের আচরণ কিছুটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। হাত ধোয়ার অভ্যাস কমে গেছে। ডায়রিয়ার এটি একটি বড় কারণ। এ ছাড়া দূষিত পানি পান, বাসি ও পচা খাবার, অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস এবং বাইরের খোলা খাবার—এ সময়ে ডায়রিয়া বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
রাজধানীর যেসব এলাকা থেকে আইসিডিডিআরবিতে রোগী বেশি আসছে, সেই এলাকাগুলো হচ্ছে মিরপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শনিরআখড়া, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, উত্তরখান, উত্তরা ও কামরাঙ্গীর চর। সাভার, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ থেকেও এখানে অনেক রোগী আসছে।
বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই পূর্বাভাস দিয়েছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগ ক্রমেই বাড়বে। আমাদের দেশ থেকে কলেরা মোটামুটি বিদায় নিয়েছিল। সেই কলেরাও আবার ফিরছে। তাই বিপদ আরো ভয়ংকর রূপ ধরার আগেই আমাদের সাবধান হতে হবে। হোটেল-রেস্তোরাঁয়, বিশেষ করে রাস্তার পাশে খাবারের দোকানগুলোতে মানুষ যাতে নিরাপদ পানি পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রায়ই এসব খাবার পরীক্ষা করে দেখতে হবে তা নিরাপদ কি না। মানুষকেও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসটি বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ডায়রিয়া বেশি সেসব এলাকায় নিরাপদ পানি ও খাদ্য নিশ্চিত করাসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে।