গত বৃহস্পতিবার ছিল জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। ‘নিরাপদ খাদ্য, সমৃদ্ধ জাতি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চাবিকাঠি’—এই প্রতিপাদ্যে দেশে ষষ্ঠবারের মতো দিবসটি পালিত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেছেন, খাদ্যের উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে খাদ্য নিরাপদ রাখা ও পুষ্টিমান বজায় রাখা জরুরি।
নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য আমরা নিশ্চিত করতে পারছি কি না। প্রশ্ন হচ্ছে, খাদ্যের উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে খাদ্য নিরাপদ রাখা ও পুষ্টিমান ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে কি না। বাস্তবতা হচ্ছে, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে খাদ্যদ্রব্যে নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যথাযথ পরিমাণে ব্যবহার করা হয় না বলে তা ক্ষতিকারক।
খাদ্যদ্রব্যে উৎপাদন পর্যায়ে কীটনাশক বা বালাইনাশক, সংরক্ষণ পর্যায়ে পচনরোধক ও প্রক্রিয়াজাতকরণের পর্যায়ে পুষ্টিবর্ধক ও স্থায়িত্ববর্ধক হিসেবে এসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। ফলে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও নিরাপদ খাদ্য এখনো মানুষের নাগালের বাইরে।
খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে কী খাচ্ছি আমরা? এই প্রশ্নটা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার।
কীটনাশক ব্যবহার করতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কৃষক মাত্রা না বুঝে মাঠে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অনেক সবজিও খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীতে পাউরুটি ও বেকারিপণ্যের খাবারের মান পরীক্ষা করে ১২২টি নমুনার মধ্যে ২৭টি নমুনায় ব্যবহার নিষিদ্ধ ক্ষতিকর পটাসিয়াম ব্রোমেট পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএসএফএ)।
পটাসিয়াম ব্রোমেট মিশ্রিত পাউরুটি বা বেকারিপণ্য খেলে মানুষের ক্যান্সার, থাইরয়েড গ্রন্থির রোগসহ নানা রোগ হতে পারে। রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁর ১৩ শতাংশ খাবার মানহীন বলে বিএসএফএর পরীক্ষায় উঠে এসেছে।
খাদ্যমান নিশ্চিত করা ও নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রবর্তনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয় নিরাপদ খাদ্য আইন। গঠন করা হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আইন ও বিধিমালার খুব যে অভাব তা নয়।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জারি করা প্রবিধানমালায় খাদ্যদ্রব্যে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ভারী ধাতু বা ধাতব পদার্থ ও অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরও খাদ্য নিরাপদ হচ্ছে না। নিশ্চিত করা যাচ্ছে না খাদ্য নিরাপত্তা।
কাজেই নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ভাবতে হবে। দেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য যেন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা না দেয় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।