কয়েক মাস ধরেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, আন্দোলনের নামে যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এবারে রেলওয়েকে যেন আক্রমণের টার্গেট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের পর থেকে গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০টি নাশকতা ঘটেছে রেলে। এসব ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে।
রেলের কর্মীসহ আহত হয়েছে অনেকে। গত ১৬ নভেম্বর রাতে টাঙ্গাইল স্টেশনে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের কোচে আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় ট্রেনের দুটি কোচ পুড়ে যায়। ১৯ নভেম্বর রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী স্টেশনে ট্রেনে থেমে থাকা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়।এ সময় দুটি কোচ পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো একটি কোচ। ২২ নভেম্বর রাতে সিলেট রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কোচে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ট্রেনে নাশকতা নতুন মাত্রা পায় ১৩ ডিসেম্বর।সেদিন রেলওয়ের ভাওয়ালগাজীপুর এবং রাজেন্দ্রপুর সেকশনে ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলা হয়। ভোরে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন সেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে।ট্রেনের ইঞ্জিন এবং ছয়টি কোচ লাইন থেকে ছিটকে পড়লে একজন নিহত হয়। আহত হয় অনেকে। ঢাকার তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুনের আরেক ঘটনায় পুড়ে যায় তিনটি বগি। যাত্রী ভর্তি এ ট্রেনে আগুনে পুড়ে মারা যায় চারজন।গত সোমবার সকালে পূর্বধলা ও জারিয়া রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী একটি রেলসেতুর কাছে ১৪টি স্লিপারের ২৮টি নাট খোলা দেখতে পেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানান আনসার সদস্যরা।খবর পেয়ে ট্রেনটিকে পূর্বধলা স্টেশনে থামিয়ে রাখা হয়। লাইন মেরামতের পর আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্বৃত্তরা নাশকতার উদ্দেশ্যে এমনটা করে থাকতে পারে। একই স্থানে এতগুলো নাট খোলা থাকার ঘটনা বিরল। পুলিশ বলছে, এটি নাশকতার চেষ্টা নয়। রেলপথের কাঠগুলো পুরনো হওয়ায় সম্ভবত কিছু নাট খুলে গেছে।তবে আশঙ্কা কি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে? ২০১৩ সালের শেষ দিকে অবরোধে সারা দেশে রেলপথে ৩১৮টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। ফিশপ্লেট খুলে ফেলা, লাইন উপড়ে ফেলা প্রভৃতি ঘটনায় সে সময় ২৫টি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এতে রেলওয়ের ২৩টি ইঞ্জিন ও ৯৯টি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় শতকোটি টাকা।সাম্প্রতিক ঘটনগুলোর পর থেকে দুর্ঘটনা কমাতে রেলের পূর্বাঞ্চলের অনেক জায়গায় গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতি কম থাকায় ঢাকায় ট্রেন পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। ফিরতি ট্রেনের যাত্রায়ও দেরি হচ্ছে।এ ধরনের নাশকতা বন্ধ করতে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সচেতন জনগোষ্ঠীকেও। সব ধরনের নাশকতা বন্ধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।