বাজেট হচ্ছে সরকারের পরবর্তী এক বছরের আয়-ব্যয়ের আগাম বিবরণী। কৃষি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রতিরক্ষাসহ নানা খাতে নাগরিকরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে সেবা ও উন্নয়ন পেতে চায়, তা কিছু পরিমাণে এই বাজেটের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়। তাই বাজেটে অর্থ জোগান দিতে নাগরিকদের আপত্তি থাকার কথা নয়, যদি রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রতি তার দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করে। নাগরিকরা রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চায়, শান্তিতে থাকতে চায়।রাষ্ট্র নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিশাল ব্যয়ও করে। বিশাল বাজেট দিয়ে নাগরিকদের ওপর বিশাল বোঝা চাপানোর পাশাপাশি নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য পালনে আরো স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ থাকা জরুরি। প্রস্তাবে বিপুলসংখ্যক পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক বসানোর ফলে সেসবের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন একসময়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হলো, যখন শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্ব এক অস্থির সময় পার করছে।করোনা মহামারি আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। তার ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড দরপতন ঘটেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া।
মানুষের আয় বাড়ছে না, কিন্তু নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বেড়েই চলেছে। এই সময়ে মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯.২৪ শতাংশ। এ রকম অবস্থায় সরকার কিভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখবে, বিশেষজ্ঞরা এমন প্রশ্ন তুলেছেন। সরকারের ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নসহ অন্য যেসব কর্মপরিকল্পনা দেখে তাঁরা বলছেন, সেখানে মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল নেই।সরকার বলছে, এটি গরিববান্ধব বাজেট। বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, এই বাজেট পাস হলে বরং গরিবসহ মধ্যবিত্তরা চাপে পড়বে। সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য যেসব কৌশল নিয়েছে তা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে মনে করেন তাঁরা।প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে ব্যবসায়ীরা বেশ কিছু পণ্যের দাম আগেভাগে বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে খেজুর, কাজুবাদাম ও সিগারেট রয়েছে।যেকোনো বাজেট প্রস্তাবের আগে বাজারে তার প্রভাব পড়ে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। কোন পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে, কোন পণ্য ও সেবার দাম কমবে—বাজেটে তার একটা প্রক্ষেপণ থাকে। জাতীয় সংসদে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা ও বিতর্কের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দেখা যায়, বাজেট প্রস্তাবের আগেই বাজারে অনেক জিনিসের দাম বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট যখন পাস হয়, তখন হয়তো ওই পণ্য বা সেবার দাম আগের মতোই থাকে; কিন্তু মাঝের এই সময়টি বাজারে ব্যবসা করে নেয় একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী।আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা আগেই টের পেয়ে যান বাজেটে কোন ধরনের পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তাই সেসব পণ্যের দাম আগেই এক দফা বাড়িয়ে দেন, বাজেট ঘোষণার পর আরেক দফা বাড়ান। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।বাজারে এমনিতেই নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এর মধ্যে নতুন করে দাম বাড়লে কেনার আর উপায় থাকবে না তাদের। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।