বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান আজ সর্বজনস্বীকৃত। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নও বেড়েছে। সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তাতেও নারীর অবদান রয়েছে। আমরা একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাই, এ দেশে ডাকসুর ভিপি ছিলেন একজন নারী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তো বটেই, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও বাঙালি নারী পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। বাংলাদেশের একজন নারী আন্তর্জাতিক দাবায় গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব পেয়েছেন।
এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন বাংলাদেশের নারী। ২০১৯ সালের বৈশ্বিক লিঙ্গ বিভাজন সূচক বা গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫০তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্বেও নারীর এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে পুলিশের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও নারীর অংশগ্রহণ আমাদের আশাবাদী করে। এখন বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের ৭.৯ শতাংশই নারী। বাহিনীতে নারী পুলিশের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৬৩। পুলিশ বাহিনীতে নারী প্রথম নাম লেখায় ১৯৭৪ সালে।
১৪ নারী পুলিশ সদস্য দিয়ে শুরু। এর মধ্যে সাতজন ছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর, সাতজন কনস্টেবল। দীর্ঘ সময় পর ১৯৮৬ সালে এসে বিসিএস ক্যাডারে প্রথম নারী প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে নারী ডিআইজি রয়েছেন দুজন, অ্যাডিশনাল ডিআইজি তিনজন, পুলিশ সুপার ৭১ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১০৯ জন ও সহকারী পুলিশ সুপার রয়েছেন ১০০ জন। এ ছাড়া নারী ইন্সপেক্টর রয়েছেন ১০৯, এসআই ৭৯৭, সার্জেন্ট ৫৮, এএসআই এক হাজার ১০৯, নায়েক ২১১ ও কনস্টেবল ১২ হাজার ৫৯৪ জন। দেশের পাঁচ জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্বে আছেন নারী। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সাময়িকী এশিয়ান সায়েন্টিস্ট আরেকটি উৎসাহব্যঞ্জক খবর প্রকাশ করেছে। এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর যে তালিকা ম্যাগাজিনটি করেছে সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের তিন নারী।
কর্মক্ষেত্রেই শুধু নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় নারীর অংশগ্রহণ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।