গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব লিমিটেড কম্পানিকে ‘নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর’ নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি কম্পানিকেই নিজেদের টাকা দিয়ে চলতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়ন হচ্ছে, সরকারি সংস্থা, যেগুলো ব্যবসার জন্য স্থাপিত হয়েছে, যেমন বিটিসিএল, বীমা, ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে চালানো অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযাগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, টেলিযোগাযোগ, সিভিল এভিয়েশন বা সমিতির হোক; দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিয়ে পুনর্ভরণ করে করে চালানো—এটা ব্যাবসায়িক সেন্সের মধ্যে পড়ে না। এসব প্রতিষ্ঠানকে চার্টার দেওয়া হয়েছে, কম্পানি অ্যাক্টে আপনাকে নিবন্ধিত করা হয়েছে, কম্পানি করা হয়েছে, পুঁজি দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আয়-ব্যয় করবে, ব্যালান্সশিট দেখাবে, নিজেরা চলবে—এটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা।
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর ধরে লোকসান হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে পাটকল খাতে প্রতিবছরই লোকসান হয়েছে। পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি দিয়ে যে উত্পাদন হয়, তাতে পাটকলগুলোকে কোনোভাবেই লাভজনক করা যায়নি। বছরের পর বছর লোকসানি পাটকলগুলোকে ভর্তুকি দিয়ে চালানো হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার পাটকলগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগের প্রথম ধাপ হিসেবে বন্ধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দুই মেয়াদে এবং চলতি মেয়াদে শেখ হাসিনা চিনিকলের লোকসান কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বেশির ভাগ নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের লোকসান কাটিয়ে উঠে মুনাফায় আসতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নই যথেষ্ট ছিল। বেসরকারি চিনিকলগুলো লাভজনক হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে কেন লোকসান হচ্ছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো প্রতিবছর যে চিনি উত্পাদন করে, তা পড়ে থাকে গুদামে। পরিকল্পিত বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় উত্পাদিত চিনি গুদামে গলে নষ্ট হয়।
দেশের চিনি, পাট ও বস্ত্রশিল্পের বেশির ভাগ সরকারি কারখানা লোকসানে চলছে। একসময়ের প্রাণচঞ্চল শিল্প এলাকাগুলো এখন আর আগের মতো নেই। অথচ একটু দৃষ্টি দিলেই সব সরকারি কারখানা লাভজনক করে তোলা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। শিল্প প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও বেসরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন লাভজনক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। দেশের পোশাকশিল্প সারা বিশ্বে বাজার সৃষ্টি করতে পেরেছে। অথচ বছরের পর বছর লোকসান গুনছে সরকারি বস্ত্র কারখানাগুলো। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ভাবতে হবে। কারখানাগুলোর আধুনিকায়নের পাশাপাশি নতুন বাজার খুুঁজে বের করতে হবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উত্পাদন করা গেলে কারখানা লাভজনক হবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান লাভজনক করতে প্রয়োজন উদ্যোগ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন। দুর্নীতি দূর করতে উদ্যোগী হলে সব প্রতিষ্ঠানই একদিন লাভজনক হবে। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি সব প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে, নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।