করোনা মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা ও আইসিইউ সংকট প্রবল হয়েছে। সে কারণে অনেক রোগীকেই নিতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে একেকটি পরিবার। রোগীপ্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ বা তারও বেশি অর্থ খরচ হয়ে যায়। সরকারি হাসপাতালেও খরচ কম নয়। কোনো কোনো ওষুধ বা ইনজেকশনের দাম লাখ টাকা পর্যন্ত। এগুলোসহ অনেক ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। কিছু পরীক্ষাও বাইরে থেকে করাতে হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে খরচ কয়েক গুণ বেশি। বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে বেসরকারি অনেক ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। করোনা চিকিৎসার অনুমোদন না থাকলেও অনেক ক্লিনিকেই চলে করোনার চিকিৎসা। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং উচ্চমূল্যে ওষুধ বিক্রির অভিযোগও আছে অনেকের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে বলা যায়, করোনা চিকিৎসায় এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলা কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের কারণে অনেকে কাজ হারিয়েছেন, অনেকের আয়-উপার্জন কমে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলে তো কথাই নেই। পুরো পরিবারটিকে রীতিমতো পথে বসতে হচ্ছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে পরিবারের কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেও এখন শুধু খরচের ভয়ে অনেক পরিবারই তাকে হাসপাতালে নিতে চায় না। বাড়িতে রেখেই অনেকে চিকিৎসা করাতে চায়। এক পর্যায়ে রোগীর অবস্থা যখন খুব খারাপ হয়ে যায় তখন হাসপাতালে নিলেও আর লাভ হয় না।
সরকারি হাসপাতালে শয্যার জন্য লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। আবার ভর্তির পরও একটি আইসিইউ শয্যার জন্য মুমূর্ষু রোগী নিয়ে অপেক্ষা করা কতটা বেদনাদায়ক তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন। অনেক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউর মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। তার পরও খরচ কম নয়। দৈনিক লাখ টাকার বেশি। সরকার কিছু সেবার মান নির্ধারণ করে দিলেও বেশির ভাগ হাসপাতালেই তা মানা হয় না। অনেক হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে। অনেকের মতে, অনেক বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই যেভাবে টোসিলিজুমরসহ উচ্চমূল্যের বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে, তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। করোনা মহামারির দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে এমন নৈরাজ্য কোনোভাবেই কাম্য নয়।
করোনার এমন দুঃসময়ে আবার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। ফলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। একদিকে মানুষের আয়-উপার্জন কমে যাওয়া, অন্যদিকে চিকিৎসার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। করোনা প্রতিরোধে দ্রুত ব্যাপকসংখ্যক মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সরকারি চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করতে হবে।