মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। ভাবতে অবাক লাগে, দিন দিন এই সমাজ কোথায় যাচ্ছে? কোন ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা? মানুষ আলোকিত দিনের অপেক্ষায় থাকে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজও আলোকিত হবে। মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। এটাই তো কাঙ্ক্ষিত। দেশে শিক্ষিতের হার বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানবিক উন্নয়ন কি হয়েছে? এমন প্রশ্ন আসে কিছু ঘটনা জানার পর। যেমনটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের বাঘঝাঁপা গ্রামে। জমি নিয়ে বিরোধে গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর দেবরের বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করে। তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ কোন সমাজে বসবাস করছি আমরা? একে তো চেনা যাচ্ছে না। এখানে সম্পত্তির লোভে নারীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে ঘাতকের হাত কাঁপছে না। সহমর্মিতার বদলে যেন নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা প্রাধান্য পাচ্ছে। একটি সমাজ দূষিত, অবক্ষয়ে জীর্ণ, মানবিক মূল্যবোধহীন এবং স্বার্থপরায়ণ হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। সমাজ থেকে কোনো ধরনের প্রতিরোধ তৈরি হয় না। চোখের সামনে নারী লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
নারী নির্যাতনের ঘটনা কেন বাড়ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতনের মামলাগুলোর ‘ঠিকমতো বিচার না হওয়ার’ কারণেই নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের মতে, নির্যাতন কমাতে হলে সত্যিকার অর্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতে হবে। যেসব মামলা হচ্ছে তার দ্রুত বিচার হতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।
আসলে আমাদের সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সহনশীল সমাজের বন্ধন আজ আর নেই। নৈতিকতাও যেন নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। আর সে কারণেই নারী নির্যাতনের ঘটনা থেমে নেই। মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ার প্রভাব পড়ছে সমাজে। দুর্বৃত্তরা সমাজকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। এ তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
সামাজিক প্রতিবাদ, সামাজিক প্রতিরোধ থাকলে এর প্রভাব পড়ে সমাজের সর্বত্র। ব্যক্তি, পরিবার সেই সুপ্রভাবের বাইরে থাকে না। এ জন্য সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা ও আইনের শাসন খুবই জরুরি। অপরাধের যথাযথ বিচার ও শাস্তি হলে সমাজ সতর্ক হয়। অপরাধপ্রবণতা কমে।
আমরা মনে করি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও কোনো বিকল্প নেই। সামগ্রিক সমাজ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, বিশেষজ্ঞদের এই মতের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি। সমাজপতিদের এগিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে নাগরিক সচেতনতা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।