টিকটক মডেল করার লোভ দেখিয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে দেশ থেকে কয়েক শ তরুণীকে পাচার করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। টিকটকের ফাঁদে পড়ে ভারতে পাচার হওয়া তরুণীদের কয়েকজন দেশে ফিরে তাঁদের ওপর নির্যাতনের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা ভয়াবহ। দেশে ফেরা তরুণীরা মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে পাঁচটি মামলা করার পর এসব মামলায় এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে এই পাচারকারীচক্রে দেশ-বিদেশের কয়েক শ সদস্য যুক্ত। শুধু ভারতে নয়, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও তারা দীর্ঘদিন ধরে নারীপাচার করেছে।
কিছুদিন আগে ভারতের বেঙ্গালুরুতে ঢাকার এক তরুণীর ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এ বিষয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে উঠে আসে টিকটকচক্রটি ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে দীর্ঘদিন থেকেই এই কারবার চালিয়ে আসছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধী মিলে এই সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীচক্রটি গড়ে তুলেছে বলেও প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। টিকটক মডেল করার লোভ দেখিয়ে ভারতে পাচার করা নারীদের বিষয়ে রিমান্ডে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশে টিকটকচক্রটির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। এই চক্রের টার্গেটে স্কুল-কলেজপড়ুয়া বখে যাওয়া তরুণী যেমন আছে, তেমনি গৃহিণীরাও আছে। অভিনব কায়দায় ফাঁদে ফেলা হয় তাঁদের। মূলত টিকটক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা একটি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়।
এদিকে রাজধানীতে সক্রিয় আরেক অপরাধীচক্র কিশোর গ্যাং। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতায় গ্রেপ্তার বাড়লেও গ্যাং সদস্যদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন নতুন গ্যাংয়ের নাম। আধিপত্য বিস্তার, পথচারীদের হঠাৎ ঘিরে ধরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া, রাস্তায় পরিকল্পিত সংঘাত তৈরির মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এসব কিশোর গ্যাংয়ের ২৩০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। আর চলতি মাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৭ সদস্যকে।
সমাজকে অধঃপতন থেকে রক্ষা করতে এসব অপরাধপ্রবণতা যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।