ঢাকা মহানগরীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পলিথিন। বুড়িগঙ্গার তলদেশে পলিথিনের প্রায় ১০ ফুট উঁচু আস্তরণ তৈরি হয়েছে। ঢাকার চারপাশের প্রতিটি নদীরই একই অবস্থা। ঢাকার ভেতরের খালগুলো মরেই গেছে। তার জন্যও প্রধানত দায়ী এই পলিথিন। শুধু তা-ই নয়, পলিথিনের বহুবিধ ব্যবহারের কারণে মানবদেহে বাসা বাঁধছে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে হরমোন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব, নষ্ট হতে পারে গর্ভবতী মায়ের ভ্রূণ, বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। কিন্তু তার পরও পলিথিনের ব্যবহার কমছে না, বরং দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান থেকে অভিজাত বিপণিবিতান সর্বত্রই পলিথিনের যথেচ্ছাচার। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হলেও তা পলিথিনের আগ্রাসন কমাতে পারছে না। এ অবস্থায় আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর ভিত্তিতে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার, উৎপাদন, বিপণন ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন করে তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ড হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সর্বোচ্চ সাজা প্রদানের নজির নেই বললেই চলে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শুধু ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে।
সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে এক হাজার ২০০টি পলিথিন কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু পুরান ঢাকায়ই আছে পাঁচ শতাধিক কারখানা। চকবাজার, মৌলভীবাজারে পাইকারি বিক্রয়সহ প্রায় সব হাটবাজারেই অবাধে পলিথিন ব্যাগ বিক্রি হতে দেখা যায়। পলিথিন ব্যাগ সহজলভ্য হওয়ায়, দাম কম হওয়ায় এবং কোনো বাধা না থাকায় দোকানিরাও যথেচ্ছভাবে সেগুলো ব্যবহার করে চলেছেন। আর একবার ব্যবহারের পরই সেগুলো যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
পলিথিনের ছড়াছড়ির পাশাপাশি যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবও সংকট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দৈনিক গড়ে প্রায় ছয় হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। প্রতিবছর প্রায় ১৮ শতাংশ হারে বাড়ছে বর্জ্য। বিশাল এই বর্জ্যের বড় একটি অংশ হলো পলিথিন। পলিথিন দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে পড়ে থাকলেও পচে না। ফলে ঢাকার আমিনবাজার, মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে তা ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে বিপাকে রয়েছে সিটি করপোরেশন। এদিকে রাজধানীর ২৬টি খাল পরিষ্কার করার কয়েক দিনের মধ্যেই পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে আবারও পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ঢাকায় যে কয়টি পানি শোধনাগার রয়েছে সেগুলোও ঠিকমতো চালানো সম্ভব হয় না শুধু এই পলিব্যাগের কারণে। এসব কারণে পলিথিন বর্জ্যকে আলাদা করে বিশেষ কৌশলে রিসাইক্লিং বা ডাম্পিং করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনের ব্যাখ্যায় থাকা দুর্বলতাগুলো দূর করতে হবে। কঠোরভাবে এসংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন