‘সবার জন্য শিক্ষা’—এ লক্ষ্যেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। শিক্ষার মানের উন্নতির প্রথম শর্ত ভালো শিক্ষক। যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষকতার চেয়ে প্রাথমিকে শিক্ষকতা কঠিন। স্পর্শকাতর ও কোমলমতি শিশুদের বুঝে শিক্ষা দিতে হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষার মান সেভাবে বাড়ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এর কারণ হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব। মানসম্পন্ন শিক্ষক না পেলে শিক্ষার মান বাড়বে না। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না পেলে শিক্ষকরা দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন না। বাংলাদেশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব সময় অবহেলিত।
প্রকাশিত এক খবরে এই অবহেলার চিত্রটি প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মাগুরার প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়টি এখন পুরোপুরি শিক্ষকশূন্য। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে ডেপুটেশনে থাকা আটজন শিক্ষকের সবাইকে গত সোমবার আগের বিদ্যালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সারা দেশের ডেপুটেশনে নিয়োজিত সব শিক্ষককে নিজেদের বিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ ডেপুটেশনে নিয়োজিত সব শিক্ষক নিজেদের বিদ্যালয়ে ফিরে গেলে সৃষ্ট শূন্যতা কী করে পূরণ হবে তার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে বই বিতরণের ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যে উদ্বিগ্ন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে গত ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে ডেপুটেশনে থাকা শিক্ষকদের ডেপুটেশন বাতিল করে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ডেপুটেশনে থাকা শিক্ষকের সংখ্যা কম থাকায় তেমন একটা সমস্যা তৈরি হয়নি। কিন্তু মাগুরার এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষিকাই ডেপুটেশনে নিযুক্ত থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল পর্যন্ত এসব পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে নির্ধারিত শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান করানো হতো। পরে ওই সব শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে ইনস্ট্রাক্টর হওয়ায় ডেপুটেশনে শিক্ষক নিযুক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।
প্রকাশিত খবরে মাগুরার প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়টির সংকটের কথা উঠে এসেছে। এমন সংকটে হয়তো সব পরীক্ষণ বিদ্যালয় পড়বে বা পড়েছে। এর বিকল্প আগেই ভেবে রাখা দরকার ছিল। সংকট সমাধানে দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা আশা করব সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট দূর করতে উদ্যোগী হবে। জরুরি ভিত্তিতে শূন্যপদে নিয়োগের সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করাই হবে প্রধান কাজ।