এই খাতে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করছে দেশের অর্ধশতাধিক ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি ঋণ বিতরণ ও আদায়ের সঙ্গে জড়িতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দারিদ্র্য দূর এবং মানুষের ভাগ্য বদল করতে এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবলম্বন তৈরি এবং শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি—সব ক্ষেত্রেই অনস্বীকার্য অবদান রেখে যাচ্ছে সিএমএসএমই খাত।
এই খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে লক্ষ্যমাত্রাও। গত চার দশকে দেশের এসএমই খাতের উৎপাদন ক্রমে বেড়েছে। গত দুই দশকে দেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদানও বেড়েছে।১৯৯৪ সালে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ছিল ২.৫৫ শতাংশ। ২০২০ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৩.৭৪ শতাংশে। ১৯৭৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশের এসএমই খাতের উৎপাদনের তথ্য তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ১৯৭৮ সালে দেশের এসএমই খাতের উৎপাদন ছিল চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা।২০১৫ সালে এসএমই খাতের উৎপাদন দাঁড়ায় ২০ হাজার ৪০ কোটি টাকায়। ২০২০ সাল নাগাদ এটি বেড়ে ৪৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি এসএমই ঋণ বিতরণ করছে। এই খাতের বিকাশ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসএমই বিভাগ চালু এবং যুগোপযোগী এসএমই ঋণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএমএসএমই নীতিমালা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ব্যাংককে তাদের নিজস্ব বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।সিএমএসএমই খাত বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু বাধাও আছে। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ঋণ পাচ্ছেন না—এমন অভিযোগ আছে। দেশের অনেক ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কাগজপত্রের জটিলতা সহজ করা উচিত। আস্থাহীনতা আর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারবে কি না—এমন আশঙ্কা থেকে ব্যাংকগুলো ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না। তবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ ফেরতের ঝুঁকি কম। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ ফেরত পাওয়ার হার ৯৯ শতাংশ। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ২৬ শতাংশ এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৪৮ শতাংশ রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি আশাপ্রদ দিক।অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য এসএমই খাতকে সম্প্রসারিত করার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তা হওয়ার মতো যোগ্য মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। ব্যবসায়ী হওয়ার জন্যও রয়েছে অনেক সেক্টর। প্রয়োজন সঠিক মানুষকে সঠিক জায়গায় নিয়ে আসা। উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা ও ক্লোজ মনিটরিং। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেদিকে দৃষ্টি দেবে, এটাই প্রত্যাশা।