আমাদের সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সহনশীল সমাজের বন্ধন আজ আর নেই। নৈতিকতাও যেন নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। গত বছর একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনের মুখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হয়নি। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোট শিশুরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
কঠোর আইন থাকলেও মামলা করা থেকে শুরু করে তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি কারণে মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসা সহায়তা নিতে আসে ২২ হাজার ৩৮৬ জন নারী। এর ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে, যার মধ্যে রায় ঘোষণার হার ৩.৬৬ শতাংশ। আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের ৫৩৬টি মামলা তদারকি করেছে। এর মধ্যে ১৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ১৯টির মধ্যে শাস্তির রায় হয়েছে চারটির।
ধর্ষণ মামলার বিচার বিলম্বিত হবে কেন? প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অভিযোগ দায়েরে দেরি হওয়া, সঠিকভাবে সঠিক সময়ে আলামত সংরক্ষণ না করা অর্থাৎ পরীক্ষার আগেই ধর্ষণের শিকার নারীর দেহ, পোশাকসহ আলামত ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলা, ফরেনসিক পরীক্ষায় দুর্বলতা, অভিযোগের সপক্ষে জোরালো সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাব বা ভয়ে-চাপে সাক্ষী অনুপস্থিত থাকা, মামলার তদন্তে পুলিশের অবহেলা, অদক্ষতা, দুর্বলতা বা সঠিক তদন্ত না হওয়ায় রেহাই পেয়ে যায় ধর্ষণে অভিযুক্তরা, বিচার পায় না ধর্ষণের শিকার নারীরা।
অভিযোগ আছে, তদন্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমা ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয় না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি দুই দশক আগে প্রণয়ন করা হলেও এখনো এর কোনো বিধিমালা করা হয়নি।
কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সব ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। আমরা আশা করব, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সামাজিক দুর্বৃত্তদের দমন করা কঠিন হবে না।