সমাজ যে ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাচ্ছে, গত কয়েক দিনের ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা তারই প্রমাণ। সিলেট, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের ঘটনার পর সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন পরিবর্তনের বিষয়টি আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠছে। কিন্তু ধর্ষণ তো থেমে নেই। পাঁচজনকে ধর্ষণ ও পাঁচজনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ বিষয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, যশোরের শার্শা উপজেলায় এক শারীরিক প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত যুবককে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তাঁর পরিবারের লোকজন।
ভুক্তভোগীর পরিবারকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় শিশু, কক্সবাজারের রামুতে স্কুলছাত্রী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় তরুণী, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে গৃহবধূকে ধর্ষণ এবং রাজবাড়ীতে বাকপ্রতিবন্ধী নারী, শরীয়তপুরে স্কুলছাত্রী, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কিশোরী, নওগাঁর রাণীনগরে গৃহবধূ, নেত্রকোনার বারহাট্টায় নববধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে সাত নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মানবাধিকার সংগঠনের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতিদিন অন্তত চারজনের ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় হলেও এই সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বছরের পর বছর এমন চিত্র দেখা গেলেও ধর্ষণ-নিপীড়ন প্রতিরোধে নেই দৃশ্যমান কার্যক্রম। স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনের কমিটি থাকলেও তারা সভা-সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
কমিটি থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আর বাস্তবায়িত হয় না। এলাকাভিত্তিক গ্যাং ও বখাটেদের প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই পুলিশেরও। ঘটনা ঘটলে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসির অভিযোগও আছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৯৭৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যেখানে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ২০৮টি। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছে ১২ জন নারী। এ সময় গড়ে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হয়েছে তিন-চারজন। ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জন নারী-শিশুকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ১০ জন নারী-শিশু। অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে বলা হচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলা করা হয়েছে এক হাজার ৮০টি।
সাম্প্রতিক সময়ের ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে সমাজ বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সেক্টরে অপরাধী গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক দুর্বৃত্ত দল তৈরি হচ্ছে।
ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিকারের পাশাপাশি আগে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জোর দিয়েছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, নারী নিপীড়ন, বখাটেপনা, অপরাধী গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নজরদারির মাধ্যমে আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে ধর্ষণের ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করেন তাঁরা।
যখন মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছে, সমাজ থেকে নৈতিকতা নির্বাসনে যায়, তখনই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-নিপীড়ন বেড়ে যায়। এর কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন