ছাত্র-জনতার রক্তঝরা অভ্যুত্থানে একটি পরিবর্তন আসে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা। রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কার করে উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভিত রচনা করবে সরকার—এটাই সবার চাওয়া।
সরকার এরই মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারে হাত দিয়েছে।বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশন সংস্কার প্রস্তাব দেবে। একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশ নতুন করে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাবে, এটাই সবার চাওয়া। সেই লক্ষ্যে সংস্কার কত দূর সম্পন্ন হলো—এ বিষয়ে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শিরোনামে দুই দিনব্যাপী সংলাপের আয়োজন করে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ।
সংলাপের প্রথম দিনে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিরা এই মত দিয়েছেন যে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। সংলাপে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশে সংস্কার প্রয়োজন। আবার নির্বাচনেও যেতে হবে। বৈষম্য দূর করে সবাইকে নিয়ে ঐক্যের বাংলাদেশ গড়তে হবে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করে একটি সুস্থ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে চাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সংস্কার বিশাল ব্যাপার। একটি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সব কিছু সংস্কার করা সম্ভব নয়।
এটি অনস্বীকার্য যে দেশে একটি পরিবর্তন দরকার। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতির গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের উন্নতি বা অবনতি। আদর্শ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব রাষ্ট্রকে উত্তরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অসুস্থ রাজনীতি থেকে মুক্তি না ঘটলে সবাইকে সামনে আরো বড় মূল্য দিতে হবে।
সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুস্থ গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। প্রত্যেকে নিজের কাজের প্রতি যত্নশীল হলে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাজনীতি পরিশুদ্ধ হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।