দেশের অর্থনীতিতে করোনার আঘাত ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। ছোটখাটো অনেক ব্যবসায় ধস নেমেছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। আর তার প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। দেশে কর্মসংস্থানের বেশির ভাগই হয় বেসরকারি খাতে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা বলছে, বেসরকারি খাতে যাঁরা চাকরি করেন তাঁদের ১৩ শতাংশ এরই মধ্যে কাজ হারিয়েছেন। চাকরি থাকলেও বেতন নেই, এমন মানুষের সংখ্যা আরো বেশি। আর ২৫ শতাংশ চাকরিজীবীর বেতন কমে গেছে। নতুন নিয়োগ থমকে আছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণা বলছে, অনেকেই শহরে টিকতে না পেরে গ্রামে চলে যাচ্ছে। আয়ের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় সেখানেও তারা দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থা যদি একইভাবে চলতে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
করোনায় শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই অর্থনীতি ধুঁকছে। যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে বেকারত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোতেও প্রায় একই অবস্থা। সেসব দেশ আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। আর তার কঠিন প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে। ধুঁকে ধুঁকে চলছে অনেক কারখানা। ছোটখাটো চার শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানায় ব্যাপক হারে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় কিছু লোক চাকরি ফিরে পেলেও এখনো বেকার প্রায় এক লাখ শ্রমিক। শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এক হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বেকার হয়ে পড়তে পারে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক। অন্য কিছু শিল্প খাতেও বড় ধরনের ধস নামতে পারে এবং বহু শ্রমিক কাজ হারাতে পারে। ধস নামতে পারে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও।
বেসরকারি শিক্ষকরাও রয়েছেন প্রবল চাপে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতনের সরকারি অংশের বাইরে শিক্ষকরা কিছুই পাচ্ছেন না। নন-এমপিও শিক্ষকরা তাও পাচ্ছেন না। টিউশনিরও সুযোগ নেই। বেসরকারি অনেক ব্যাংকেই কর্মীদের বেতন কমেছে, হচ্ছে কর্মী ছাঁটাই। পর্যটন, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ অনেক খাতেই চলছে কর্মী ছাঁটাই অথবা কম বেতন দেওয়া। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৩৫ লাখ (১৫-৬৫ বছর বয়সী)। এর মধ্যে ২৭ লাখ ছিল বেকার। ছদ্ম বেকারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৬ লাখ। বর্তমানে বেকার ও ছদ্ম বেকারের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে।
বড় অর্থনীতির দেশগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও নানাভাবে প্রণোদনা বা সহযোগিতা জুগিয়েছে। ফলে সেসব দেশে করোনার প্রভাব ততটা মারাত্মক হতে পারেনি। বাংলাদেশেও বিভিন্ন খাতে ঋণ সুবিধাসহ কিছু সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেসব বাস্তব চাহিদার তুলনায় খুবই কম। সরকারকে মনে রাখতে হবে, কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার বহুমুখী প্রভাব পড়বে সমাজে। এর ফলাফল দেশের স্থিতিশীলতার জন্যও শুভ হবে না। সে কারণে কর্মসংস্থান অটুট রাখার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন