খননযন্ত্র দিয়ে পাহাড় কাটা হয়, বড় বড় ট্রাকে সেই মাটি পরিবহন করা হয়, অথচ প্রায়ই তা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যায়। মাঝেমধ্যে লোক-দেখানো অভিযানে কিছু অর্থ জরিমানা করা হয়, যা এসব চক্রের কাছে প্রায় কিছুই না। প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর অন্যতম সহচর হজরত চাষনীপীর (রহ.)-এর মাজারের টিলা কেটে সেই জায়গাও দখলে নিচ্ছে একটি চক্র।
এ পর্যন্ত সেখানে প্রায় অর্ধশত কাঁচা ও আধাপাকা ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।মাজারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করে, পরিবেশ অধিদপ্তরে ঘোরাঘুরি করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
নগরের গোয়াইটুলা এলাকার যে টিলায় হজরত চাষনীপীর (রহ.)-এর মাজার, সেটি চাষনীপীরের টিলা নামে পরিচিত। পৌনে দুই একরের টিলায় রয়েছে প্রচুর গাছপালা। এখানে কয়েক শ বানরের বসতি থাকায় এটি বানরের টিলা নামেও পরিচিত।
এরই মধ্যে টিলার প্রায় এক-চতুর্থাংশই কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সেখানে ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। ভাড়া থেকে মাসে আয় প্রায় লাখ টাকা। এখানে মাদক ব্যবসাসহ অনেক অসামাজিক কাজ হয় বলেও অভিযোগ আছে। মাজারের মুতাওয়াল্লি জানান, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
সেখানে কয়েকজনকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত করা হয়, কিন্তু বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটা। এরপর থানায় দেওয়া অভিযোগের কাগজ নিয়ে তিনি যান পরিবেশ অধিদপ্তরে। সেখানে জনে জনে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়-টিলাসমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে মাটি কেটে পাহাড়-টিলার চিহ্ন মুছে দেওয়ার কাজ। অতীতে দেখা গেছে, সারা দিন যে পাহাড় ছিল একেবারে সুনসান, রাতে হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে সেসব পাহাড়েই চলে মাটি কাটার মহোৎসব। শত শত ট্রাকে সেসব মাটি পরিবহন করা হয়। একই অবস্থা চলে হবিগঞ্জেও।
পাহাড় ও টিলা কাটা রোধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট, কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সিলেটে যেভাবে টিলা নিধন চলছে, তাতে কয়েক বছর পর এখানে আর টিলা খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেই মনে হচ্ছে।