করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বা ভারতীয় ধরন কতটা ভয়ংকর তার প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে মহামারির বিস্তার থেকে। সারা দুনিয়া এখন এই ভেরিয়েন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিজ্ঞানীদের মতে, করোনাভাইরাসের এই ধরনটি অন্য যেকোনো ধরনের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। বাংলাদেশেও এই ধরনটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।
শুরুতে এটি ছিল সীমান্ত এলাকায়, এখন সারা দেশেই এর উপস্থিতি শনাক্ত হচ্ছে। আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, তারা মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ঢাকার ৬০ জন করোনা রোগীর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে ৬৮ শতাংশের মধ্যে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট পেয়েছে। এর আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটও (আইইডিসিআর) ঢাকায় ৫০ শতাংশ রোগীর মধ্যে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট পেয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মহামারি ভারতের মতোই ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।
ঢাকাসহ সারা দেশেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সীমান্ত এলাকার অনেক হাসপাতালেই রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। এ অবস্থায় শুধু লকডাউন ঘোষণা করে বসে থাকলে হবে না। রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ব্যাপক হারে টিকা প্রদানের পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন। ভারতে কিংবা অন্য অনেক দেশে রাস্তায় কিংবা জনসমাগমের স্থানে তাত্ক্ষণিক নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমাদের দেশেও তা করা প্রয়োজন। তা না হলে রোগের বিস্তার দ্রুততর হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি জানবেন না তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে তিনি পরিবার ও সমাজে মেলামেশা করবেন এবং ভাইরাস ছড়াতে থাকবেন। ঢাকার কাছাকাছি জেলা টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে তথ্য দিয়েছে তাতে সারা দেশে দৈনিক শনাক্তের গড় হার ১৫.৪৪ শতাংশ হলেও টাঙ্গাইলে তা ছিল ৩৬.১০ শতাংশ এবং গাজীপুরে ছিল ২৫.৬৬ শতাংশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে থাকবে। এ অবস্থায় সংক্রমিত ব্যক্তিরা যদি অচিহ্নিত থেকে যায়, তাহলে সংক্রমণ আরো দ্রুততর হবে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ দ্রুত বেড়ে যাবে। সেই অবস্থা কিভাবে সামাল দেওয়া হবে, তার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।
হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বড় বিপর্যয় এড়ানোর জন্য হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সুবিধা বাড়াতে হবে। অক্সিজেন সংকট মোকাবেলার মতো প্রস্তুতি থাকতে হবে। এবার গ্রামাঞ্চলেও সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই জেলা হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি উপজেলা হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
আশা করা যায়, টিকার সংকট আমরা দ্রুতই কাটিয়ে উঠব। সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত টিকা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততম সময়ে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি রাখতে হবে। পাশাপাশি লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে।