শুধু নবগঙ্গা নদীর ওপরই আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে আড়াআড়ি সাতটি বাঁধ দেওয়া হয় মাছ চাষ করার জন্য। এভাবে নদীতে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় নদী ভরাট প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন মাটির বাঁধগুলো অপসারণ করেছে, কিন্তু তাতে প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর প্রবাহ ফিরবে কি?
সারা দেশেই নদ-নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার অসংখ্য ঘটনা ঘটে। কিছু ঘটনা পত্রপত্রিকায় আসে।
এর মধ্যে কোনো কোনোটি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে কিংবা নজরে এলে হাইকোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নদী রক্ষার ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে—এই প্রশ্ন থেকেই যায়।প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাঁধ ও ভরাটের কারণে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় জেলেরা বেকার। সেচের অভাবে মাঠে ফসল হয় না।বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ফসল নষ্ট হয়। এসব কারণে নবগঙ্গা নদী রক্ষা পরিষদের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। গত ১০ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ‘নবগঙ্গায় ২ কিমিতে আড়াআড়ি সাত বাঁধ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে পরদিন পত্রিকাটির ওই কপি সংযুক্ত করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়।এরপর গত ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নবগঙ্গা নদীর অবৈধ বাঁধ অপসারণে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসককে রুলসহ আদেশ দেন। এরই ভিত্তিতে অবৈধ বাঁধ অপসারণের কাজ শুরু হয়।অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ২০০৭ সালে নবগঙ্গা নদীর হামিরহাটি, চাঁদপুর, হাকিমপুর, জাড়গ্রাম অংশের প্রায় ৬০ একর জমির শ্রেণি পরিবর্তন করাতে সক্ষম হয় এবং ‘বাঁওড়’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়।এর পর থেকে প্রভাবশালীরা লিজ নিয়ে নদীর এই অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছিল। স্থানীয় লোকজনের মাছ ধরা তো দূরের কথা, নদীতে নামতেও দেওয়া হতো না। অথচ এলাকার মৌজা ম্যাপে নবগঙ্গা নদীর সীমানা স্পষ্টভাবে অঙ্কন করা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন সেটি সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বললেই চলে।হাইকোর্ট থেকে অতীতে অনেকবার বলা হয়েছে, নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণে ব্রিটিশ আমলের ক্যাডেস্টাল সার্ভে বা সিএস নকশা অনুসরণ করতে হবে। আমরা আশা করি, সিএস নকশা ধরে নবগঙ্গার সীমানা নির্ধারণে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি নবগঙ্গাসহ ঝিনাইদহের সব নদী খননে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে, এমনটাই প্রত্যাশিত।