বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের নদীগুলো ঘিরে একসময় গড়ে উঠেছিল বড় বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কিন্তু এখন দেশের অনেক নদীই হারিয়ে গেছে। অনেক নদী মৃতপ্রায়। নগরসভ্যতা আর বাণিজ্যের প্রাণ যে নদী, সেই নদীতে আজ দখলদারদের নজর পড়েছে। একসময় বড় বড় কলকারখানা গড়ে উঠেছিল যে নদীর পারে, সেই নদীগুলো চলে যাচ্ছে অন্যের দখলে। দূষণ বাড়ছে। নদীর সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের নদীগুলোতে একসময় মাছের প্রাচুর্য ছিল। নদীর সেই মৎস্যসম্পদ হারিয়ে গেছে। নদীর পারে গড়ে ওঠা কলকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। কোনো কোনো বড় প্রতিষ্ঠান নদীর জমি দখল করে গড়ে তুলেছে অবৈধ ভবনও।নদীখেকোরা শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই তৎপর। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহের নান্দাইলের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহ আটকে আওয়ামী লীগ নেতারা মাছ চাষ করছেন। এ কারণে এলাকার দুই শতাধিক জেলে নদ থেকে মাছ ধরতে পারেন না। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত বাঁশ ও জাল দিয়ে নদে আড়াআড়ি প্রায় ৫০০ ফুট লম্বা বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের বাঁধ রয়েছে তিনটি। প্রতিটি বাঁধের ভেতরে দল বেঁধে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়েছে, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত বেরুলা খাল দখল-দূষণে এখন অস্তিত্ব সংকটে। বাজারের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালটি প্রায় দখল হয়ে গেছে।খালের ওপর দখলকারীদের কেউ নির্মাণ করেছে টিনের দোকানঘর, আবার কেউ আরসিসি পিলার দিয়ে খালজুড়ে নির্মাণ করেছে পাকা ভবন। খালের ওপর প্রভাবশালীরা দেড় শতাধিক দোকান তুলেছেন। এসব দোকানে প্রভাবশালীদের কেউ নিজেরা ব্যবসা করছেন, আবার কেউ ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে টাকা তুলছেন। একের পর এক দখলের ফলে খালটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে কোথাও কোথাও খালটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও খালটি সরু ড্রেনে পরিণত হয়েছে।
১৯৭৫ সালে আমাদের দেশে নদীপথ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে তা কমে এসেছে ছয় হাজার কিলোমিটারে। শুষ্ক মৌসুমে এই পথ আরো কমে যায়। এসব নদীর নাব্যতাও কমে যাচ্ছে। তার ওপর যদি এভাবে দখল চলতে থাকে, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে সব নদীপথ। কাজেই নদী দখল রোধ করতে হবে। অবৈধ দখলদারদের অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে।