নাগরিকজীবনে যত ধরনের বর্জ্য তৈরি হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর মনে করা হয় চিকিৎসা বর্জ্যকে। সেই চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও আমাদের রয়েছে সীমাহীন অবহেলা ও উদাসীনতা। হাসপাতালগুলোতে বর্জ্য ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয় না। এসব বর্জ্য সংগ্রহ, ডাম্পিং ও ধ্বংসের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা থাকার কথা বেশির ভাগ সিটি করপোরেশনে তা নেই।
এমনকি অনেক বর্জ্য সঠিক পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত না করেই পুনর্ব্যবহারের জন্য চোরাইপথে কেনাবেচা করা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর গবেষণায়ও উঠে এসেছে এমন তথ্য। গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। তাতে বলা হয়, দেশে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণের প্রতিটি ধাপে অসংগতি, কার্যকর আইন-বিধিমালার অভাব, আইন বাস্তবায়নের দুর্বলতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে পরিবেশ ও নাগরিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
টিআইবির জরিপে ১৮১টি হাসপাতালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব হাসপাতালের ৬৬ শতাংশের বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট ঘর নেই। বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখা হয়। বিধি অনুযায়ী বর্জ্য পরিশোধনে অটোক্লেভ যন্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ৪৯ শতাংশ হাসপাতালে এই যন্ত্র নেই। ‘চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা ২০০৮’ অনুযায়ী বর্জ্যভেদে সংরক্ষণের জন্য ছয়টি নির্দিষ্ট রঙের পাত্র রাখার নির্দেশনা থাকলেও ৬০ শতাংশ হাসপাতালে তা নেই। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসপাতালের তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ৮৩ শতাংশ হাসপাতালেই ইটিপি নেই।
জরিপের আওতাভুক্ত ৮০ শতাংশ সিটি করপোরেশন বা পৌরসভায় চিকিৎসা বর্জ্য শোধনাগার নেই। জরিপকৃত সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার ১৪ শতাংশের চিকিৎসা বর্জ্য অপসারণ করার জন্য কোনো ল্যান্ডফিল নেই। চিকিৎসা বর্জ্যের মতো অতি ক্ষতিকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এমন অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়, তদারকি ও তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে ‘কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা; আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে ‘চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা-২০০৮’ সংশোধন করা; পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় সুস্পষ্টভাবে চিকিৎসা বর্জ্যকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
আমরা আশা করি টিআইবির সুপারিশগুলো সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অতিদ্রুত দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।