মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করাসহ ১৮টি ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করায় জন্ম নিবন্ধনের প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। এ ছাড়া বয়স্কভাতা, শিক্ষাভাতা চালু হওয়ার পর গ্রাম এলাকায়ও এর গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। ২০০০ সালের পূর্ববর্তী আদমশুমারি অনুযায়ী মাত্র ৮ শতাংশ লোকের জন্ম নিবন্ধন করা ছিল। সে কারণে ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
প্রথম দফায় প্রকল্পের কাজ চলে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় দফার কাজ। ২০১০ সালে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ডিজিটাল নিবন্ধন শুরু হয়। সেই সফটওয়্যার অকেজো দাবি করে ২০১৯ সালে সরকার নিজেই নতুন সফটওয়্যারে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংরক্ষণ শুরু করে। তিন বছরের মাথায় এসে এখন বলা হচ্ছে, এই সফটওয়্যারও হালনাগাদ (আপডেট) করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের বার্ষিক পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে যে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে ২১ বছরেও নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করতে পারছে না সরকার।
কেন নির্ভুল সনদ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না? সফটওয়্যারের সীমাবদ্ধতা দূর করা, একাধিক নিবন্ধন বাতিল করা, জন্মের ৪৫ দিনের মধ্য নিবন্ধন নিশ্চিত করার হার বৃদ্ধি, মৃত্যু নিবন্ধনের হার বৃদ্ধি, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে নতুন সফটওয়্যারের সংযোগ স্থাপন, জন্ম তারিখ সংশোধনের অস্বাভাবিক প্রবণতা কমানো এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব—নির্ভুল জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এসব বিষয় এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমন কথা বলেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নির্ভুল তথ্য দিতে না পারার জন্য নাগরিকদের দায়ী করছে তারা।
তবে এর বাইরেও অনেক সমস্যা রয়েছে। বাস্তবে জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নাগরিকদের। জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ করার সময় কর্মীদের ভুলের কারণে সেবাগ্রহীতাকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। নিবন্ধনের সময় একটি তথ্য ভুল হলে সেবাগ্রহীতাকে সিটি করপোরেশন বা ইউনিয়ন এবং জেলা প্রশাসক বা ইউএনওর কার্যালয়ে অন্তত দুটি দপ্তরে সংশোধনের জন্য ঘুরতে হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীও স্বীকার করেছেন জন্ম নিবন্ধন সংশোধনে অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
জন্ম সনদ কেন লাগে, কোথায় লাগে—এ সম্পর্কেও সাধারণ মানুষ খুব একটা অবহিত বলে মনে হয় না। জন্ম-মৃত্যু শাখার ব্যাপারেও সাধারণের জ্ঞান সীমিত। মৃত্যুর পর গোরস্তানেই দাফনকৃত মৃতের নামধাম রেজিস্ট্রি করার একটা বিধান আছে এবং তা মোটামুটি সবার জানা। সেখান থেকে মৃত্যু সনদ দেওয়ার জন্য করপোরেশনের একটা ব্যবস্থার বিষয়েও মানুষ জানে। কিন্তু জন্ম সনদ কিভাবে পাওয়া যাবে, সেটা তেমন জানা নেই মানুষের। ফলে স্কুলে ভর্তি বা অন্য কোনো প্রয়োজনে সন্তানের জন্ম সনদ আনার জন্য যখন মা-বাবা, অভিভাবকের ওপর চাপ দেওয়া হয়, তখনই তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়।
স্থানীয় সরকার কাঠামোগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান অসুবিধাগুলো দূর করা সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন। তা ছাড়া জন্ম ও মৃত্যু একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়ায় নিবন্ধন প্রক্রিয়াকেও সহজ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।