খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে হঠাৎ করেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ই-কমার্স। অথচ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্বের গ্লানি থেকে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ ছিল। বর্তমানে দেশে আনুমানিক আড়াই হাজার ই-কমার্স সাইটের বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন অন্তত পৌনে দুই লাখ উদ্যোক্তা।
অথচ হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অপকর্মে ঝুঁকিতে পড়েছেন কয়েক লাখ নতুন উদ্যোক্তা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এমএলএম কম্পানি, সমবায় সমিতির নাম দিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার বহু নজির ছিল। এবার ই-কমার্সের নামে প্রতারণা করে অন্তত ১১টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে তিন হাজার ৩১৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাহিদার পণ্য না পেয়ে অনেকেই এখন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছে।
প্রলোভনের ফাঁদ পেতে ব্যবসা চালাতে গিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশের সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতকে আস্থার সংকটে ফেলে দিয়েছে। কয়েক লাখ সদস্যের কাছ থেকে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গত দুই মাসে এমন অন্তত আটটি অ্যাপভিত্তিক কম্পানিও উধাও হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এই প্রতারণায় দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত।
ই-কমার্স কিংবা মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ঠেকাতে সরকার ঠিকমতো কাজ করে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘টাকাটা যে নিয়ে গেল সেটার কী হবে?’ ই-কমার্সের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নেওয়ার পর সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশনা মেনে চলেনি অনেক প্রতিষ্ঠান।
ই-কমার্সের নামে মানুষ ‘ঠকানোর’ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সরকার ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করবে।
প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তবে গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে। কোথাও বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই খোঁজখবর নেওয়া সবারই দায়িত্ব। প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। দুর্বৃত্তদের কারণে কোনো সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে না।