জানা যায়, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দুদকের আবেদন আদালত গ্রহণ করায় শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য, সাবেক ১৭ মন্ত্রী ও ১৭ সংসদ সদস্য তাঁদের উৎসবহির্ভূত সম্পদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার এবং দলীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে উৎসবহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর দুদক তদন্তের স্বার্থে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া শেষে রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে এসব অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসিনা পরিবারের ১৭০ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুল; শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা সিদ্দিক, রেহানার সন্তান রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও টিউলিপ সিদ্দিক।
আওয়ামী সরকারের সাবেক ১২ মন্ত্রী ও পাঁচ প্রতিমন্ত্রীর নামে থাকা ৫১০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক এক মন্ত্রী ও তিন প্রতিমন্ত্রীর নামে থাকা দুই হাজার বিঘা স্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে বহুল উচ্চারিত স্লোগান। বাস্তবে দেশে দুর্নীতি বাড়ছে, কমছে না। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণহারা দুর্নীতির লাগাম যেকোনো মূল্যেই টেনে ধরতে হবে।
এর জন্য সবার আগে দরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে বের করে আনা, সেগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া। এর আগেও বিভিন্ন সময় দুদক অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উৎসবহির্ভূত আয় নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সম্পদসংক্রান্ত হলফনামা বিধি মোতাবেক কেন নেওয়া হয় না এবং সেটি যাচাই-বাছাই করা হয় না, সে প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। আশা করি, দুদক সাম্প্রতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখবে।