সাম্প্রতিক নানা গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বলা বাহুল্য, তাদের বড় অংশই দরিদ্র। অথচ ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।
দরিদ্র রোগীরা সেসবের ধারেকাছেও যেতে পারে না। সরকারি সব হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। যেগুলোতে চিকিৎসার সুযোগ আছে, সেগুলোতেও দুর্নীতি-অনিয়ম এত বেশি যে দরিদ্র রোগীদের ভোগান্তির কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। এমনই একটি দুঃখজনক খবর পরিবেশিত হয়েছে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নিয়ে। সেখানে চিকিৎসার জন্য টিকিটই কিনতে হয় কয়েক শ টাকার বিনিময়ে। বিনা মূল্যের ওষুধ পেতে খরচ করতে হয় দুই হাজার টাকারও বেশি।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মেহেরপুর থেকে সজীব নামের এক যুবক অসুস্থ মাকে নিয়ে এই হাসপাতালটিতে এসেছিলেন। রাত ৪টায় এসে টিকিটের জন্য লাইন দিতে গিয়ে দেখেছেন তাঁর সামনে ৪০টি পানির বোতল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর লাইন চলে গেছে ৪০ জনের পেছনে। ১টা বাজলেই টিকিট বিক্রি বন্ধ। এত পেছনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসক দেখাতে পারবেন কি না—এই ভয়ে সবুজ ২০০ টাকা দিয়ে আগের দিকের একটি ‘সিরিয়াল’ কিনে নেন। এভাবে প্রায় সবাই এখানে টিকিটের সিরিয়াল কেনেন।
এসব বোতল সাজিয়ে রাখেন হাসপাতালেরই কর্মচারীরা। এর আগেও এসব অনিয়মের ব্যাপারে গণমাধ্যমে অনেক খবর এসেছে। জানা যায়, টিকিট কেনার পরও চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় অনেক জটিলতা থাকে। কেমোথেরাপি নিতে একটি কক্ষে গিয়ে ফাইল জমা দিতে হবে। সেখানে সিরিয়াল হয়। বিনা মূল্যে ওষুধের জন্য আরেক কক্ষে সিরিয়াল দিতে হয়। গ্রাম থেকে আসা মানুষের পক্ষে সেসব করে ‘সময়মতো’ চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। তখন তারা পিয়ন, ওয়ার্ড বয়দের সহায়তা নিতে যায়।
তখনই বিনা মূল্যের কেমোথেরাপির ওষুধ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। শুধু অব্যবস্থাপনাই নয়, হাসপাতালের চিকিৎসার সময় ও সুযোগ নিয়েও রয়েছে বহু প্রশ্ন। পরীক্ষার জন্যও সিরিয়াল নিতে হয়। সেখানে গেটের ভেতরে প্রথম দিকের সিরিয়াল কিনতে ব্যয় হয় ৫০০ টাকা পর্যন্ত। গুরুতর রোগীদের ভেতরে নিতে হুইলচেয়ারের জন্য দিতে হয় ২০০ টাকার মতো। এত কিছুর পরও নির্দিষ্ট পরীক্ষা কিংবা রেডিওথেরাপি মিলবে কি না সেটি নির্ভর করে ভাগ্যের ওপর। প্রায়ই দেখা যায় যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে আছে।
সারা দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সার চিকিৎসার সব ধরনের সুযোগ সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালেও দ্রুত এসব সুযোগ সম্প্রসারিত করা জরুরি। পাশাপাশি জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটসহ সরকারি হাসপাতালের অনিয়ম দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।