সংযুক্ত আরব আমিরাত বিদেশি নাগরিকদের জন্য গোল্ডেন ভিসা চালু করে ২০১৯ সালে। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশটি গোল্ডেন ভিসা ইস্যু করেছে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি।
জানা যায়, ২০২২ সালে দুবাইয়ে ৯০ হাজারের বেশি জমি ও বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিনিয়োগে বিদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে। দুবাইয়ে বহু বাংলাদেশি উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা বৈধভাবে বিনিয়োগ করছেন। আবার বহু বাংলাদেশি উদ্যোক্তা অবৈধভাবেও বিনিয়োগ করেছেন। এদের সংখ্যা বৈধ বিনিয়োগকারীর তুলনায় অনেক বেশি।
দুবাই এখন আন্তর্জাতিক ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফলে সেখানে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শাখা অফিস খুলেছে। এ ছাড়া দেশটিতে এখন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার জন্য কয়েকটি ব্যাংক সেখানে শাখা খুলেছে। জানা যায়, দুবাইয়ে বাংলাদেশের লক্ষাধিক প্রবাসী রয়েছেন।
তারা সেদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত; তাদের বেশিরভাগই শ্রমিক হিসাবে কর্মরত। তারা আয়ের একটি বড় অংশ দেশে পাঠিয়ে থাকেন। আগে আমিরাত থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসত। এখন আর দেশটি রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষে নেই। নেমে এসেছে তৃতীয় স্থানে। করোনার পর দেশটি থেকে বৈধপথে রেমিট্যান্স কমলেও অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ বাড়ছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমিরাত থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪৭ কোটি ডলার ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছে ২৪৪ কোটি ডলার। এরপর প্রতিবছরই দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসা কমছে। দেশটিতে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী প্রেরণ করা হলেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এর কারণ সেখানে হুন্ডি চক্র খুবই সংঘবদ্ধ। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেলে সেবার মান বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
হুন্ডিতে অর্থ প্রেরণ সহজ হওয়ায় সম্প্রতি দুবাইয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশে গমনের মাত্রাও বেড়েছে। হুন্ডির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ব্যাংকিং চ্যানেল কেন পিছিয়ে পড়ে তা খুঁজে বের করতে হবে। সব প্রবাসী বাংলাদেশি যাতে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়। পাচারের ছিদ্রগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বহুদিন ধরেই দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি হতাশাজনক। কাজেই অর্থ পাচার রোধে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশে পুঁজির নিরাপত্তার অভাব অনেকাংশে দূর করে থাকে। বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের বড় অংশ দুর্নীতির টাকা। কাজেই দুর্নীতির লাগামও টেনে ধরতে হবে শক্ত হাতে।