করোনা মহামারি এখনো বিশ্বব্যাপী এক আতঙ্কের নাম। প্রথম দফা সংক্রমণ কিছুটা কমতে না কমতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ। ইউরোপের অনেক দেশে তা আগের চেয়েও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশেও শিগগিরই দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ দেখা দিতে পারে এবং তা আগের চেয়ে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এর জন্য তাঁরা দায়ী করছেন মানুষের অসচেতনতা ও নিয়ম-কানুন না মানার প্রবণতাকে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়গুলো অনেকেই উপেক্ষা করছে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’। অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে ঢোকা যাবে না, কোনো সেবাও পাওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্টদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করার জন্যও কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মাস্ক পরা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার এবার দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে তিন কোটি মানসম্মত মাস্ক বিতরণের কর্মসূচি নিয়েছে।
করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে থাকা প্রাথমিক আতঙ্ক কেটে গেছে। অনেকের কাছেই এটি আর দশটা রোগের মতো গা-সওয়া হয়ে গেছে। ভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনসহ যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, সেগুলো প্রায় উঠে গেছে। হাট-বাজার, বিপণিবিতানে আগের মতোই ভিড় জমে উঠেছে। বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানাদিও চলছে অবাধে। বাসসহ গণপরিবহনে মানা হচ্ছে না কোনো সতর্কতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অসচেতনতার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। করোনাভাইরাসের কার্যকর কোনো প্রতিষেধক এখনো মানুষের আয়ত্তে আসেনি। আবার আমাদের দেশে পরীক্ষা না হওয়া টিকার ব্যবহার নিয়েও বিশেষজ্ঞরা শঙ্কায় রয়েছেন।
এই অবস্থায় করোনা মহামারি থেকে বাঁচার এখনো প্রধান বা একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও নিয়ম-কানুন মেনে চলা। মাস্ক পরতে হবে, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এটি যেমন মানুষের সচেতনতার বিষয়, একইভাবে এটি কর্তৃপক্ষীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগেরও বিষয়। আবার মানুষকে সচেতন করাটাও জরুরি। এ জন্য নানা রকম উদ্যোগ নিতে হবে। ‘আসুন সবাই মাস্ক পরি, করোনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’—এই স্লোগান সামনে নিয়ে সারা দেশে ৫০৪টি স্পটে স্কাউটদের মাধ্যমে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হবে। একই সঙ্গে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ঘোষণা এবং বিনা মূল্যে সরকারের তিন কোটি মাস্ক বিতরণের কর্মসূচি করোনা মহামারি প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর দুটি উদ্যোগ। এখন ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রশাসনকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। অফিস-আদালত, শপিং মলসহ সর্বত্র মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পথেঘাটে, পরিবহনে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে অভিযান চালাতে হবে। আমরা আশা করি প্রথম ঢেউয়ের মতো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায়ও বাংলাদেশ সফল হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন