এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ঘরবাড়ি ও খেতের ফসলের মতো বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের জলাশয়গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে। তা ছাড়া বাণিজ্যিক মৎস্যচাষি হিসেবে নিবন্ধিত নন, কিন্তু নিজেদের পুকুরের মাছ থেকে যেসব গৃহস্থ পরিবারের পুষ্টিচাহিদা আংশিকভাবে পূরণ হয়, তাঁরাও এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ, মাছের ঘেরের মতো পুকুরগুলোও প্লাবিত হয়েছে এবং মাছ ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে মাছের ক্ষতির ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ।
আর বাণিজ্যিকভাবে মাছ উৎপাদন করেন এমন ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষির সংখ্যা সাড়ে ৪৭ হাজারের বেশি বলে মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে। বন্যা এখনো চলছে। চলমান এ বন্যায় মৎস্য খাতে এ পর্যন্ত যে ক্ষতির হিসাব মৎস্য অধিদপ্তর প্রাক্কলন করেছে, তার পরিমাণ ৩৮২ কোটি টাকা। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানেও উপকূলীয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক মৎস্যচাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আম্পান ও চলমান বন্যা মিলিয়ে মৎস্য খাতে মোট ৭৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছে।
আমাদের জাতীয় অর্থনীতির সবচেয়ে উজ্জ্বল খাতগুলোর অন্যতম মৎস্য খাত। কয়েক বছর ধরে এই খাতে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করে চলেছে। ২০১৭ সালে স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে উঠে আসে। তারপর থেকে ধারাবাহিক অগ্রগতি বজায় রেখে আমরা এই অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছি। স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন চীন ও ভারতের পরেই আমাদের স্থান।
সব ধরনের মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থান এখন বিশ্বে পঞ্চম। এই সাফল্যজনক মৎস্য খাত এবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তার শিকার শুধু মৎস্যচাষিরা নন; গোটা জাতীয় অর্থনীতি। এর ফলে আন্তর্জাতিক অবস্থানে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠেছে।আমাদের মৎস্য খাতকে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হবে এবং এর সাফল্যের ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্য সব মানুষের মতো মৎস্যচাষিদেরও ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অনেকের নতুন করে ঘরবাড়ি বানাতে হবে। তাঁদের অর্থসংকট শুধু বাণিজ্যিক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা নয়; ঘরবাড়ি নির্মাণ, মেরামতসহ স্বাভাবিক জীবনে ফেরায়ও বাধা। তাই সরকারের উচিত তাঁদের জন্য নগদ অর্থসহায়তার ব্যবস্থা করা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যেমন বীজের ব্যবস্থা করা হয়, মৎস্যচাষিদের জন্যও তেমন পোনার ব্যবস্থা করা উচিত। এই বাবদে নগদ অর্থ প্রদান করা হলে তাঁরা নিজেরাই পোনা সংগ্রহ করতে পারবেন।