বসবাসযোগ্যতার বিচারে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি ঢাকা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রতিবছর বিশ্বের প্রধান প্রধান শহরের যে তালিকা করে, তাতে ঢাকার অবস্থান বরাবরই তলানিতে থাকে। এই তালিকা তৈরিতে পরিবেশদূষণ, যানজট, জলাবদ্ধতাসহ যে ৪০টি সূচক ব্যবহার করা হয়, তার প্রায় সব কটিতেই ঢাকার অবস্থান থাকে নিচের দিকে। এর কারণগুলোও আমাদের অজানা নয়।
এ জন্য দায়ী দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকার উন্নয়নে বেশ কিছু পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে যানজট কিছুটা কমেছে। ধারণা করা হয়, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ঢাকার যানজট আরো কমবে। এবার ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বায়ুদূষণ কমানোর লক্ষ্যেও কাজ করা হচ্ছে।
ঢাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ এখানকার খালগুলো দখল ও দূষণে ভরাট হয়ে যাওয়া। একসময় ঢাকায় ৪৬টি খাল ছিল। এখন ২৬টি খাল কোনো রকমে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এসব খাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা সেগুলো দখলমুক্ত ও নাব্য করার ক্ষেত্রে তেমন কিছুই করতে পারেনি। তাই খালগুলোর দায়িত্ব আবার ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। শনিবার থেকেই ডিএসসিসি খাল পুনরুদ্ধার কর্মসূচি শুরু করেছে। প্রথম দিনে বাংলামোটরের পান্থকুঞ্জ পার্ক থেকে ধানমণ্ডির রাসেল স্কয়ার পর্যন্ত দীর্ঘ বক্স কালভার্টের পাঁচটি পয়েন্ট পরিষ্কার করা হয়েছে। পাঁচটি ড্রেনেজ পিট (মুখ) থেকে ৭৪ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। কালভার্টটিতে এমন পয়েন্ট আছে ২৪টি। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তাঁদের এই কাজ চলমান থাকবে। পান্থপথ কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণের পর সেগুনবাগিচা কালভার্টের বর্জ্য অপসারণ করা হবে। পাশাপাশি জিরানী, মাণ্ডা ও শ্যামপুর খালেও পরিচ্ছন্নতাকাজ চালানো হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডিএনসিসিও খুব শিগগির অনুরূপ কর্মকাণ্ড শুরু করবে।
শুধু খাল নয়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। দখল, দূষণ ও ভরাট হয়ে সেগুলো এখন মৃতপ্রায়। গতকাল কালের কণ্ঠ’র প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি আলোকচিত্রই বলে দেয়, নদীগুলোর পানির কী অবস্থা। ডেমরার কাছে বালু নদের পানিতে যেন আলকাতরা মেশানো রয়েছে।
অথচ শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও বুড়িগঙ্গা—এই চারটি নদী রক্ষায় ২০০৯ সালে হাইকোর্ট থেকে ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। নদীকে জীবন্ত সত্তাও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের সেসব নির্দেশনা যে যথাযথভাবে পালিত হয়নি, এই আলোকচিত্রটি তারই প্রমাণ। আমরা চাই, ঢাকার চারপাশের নদী ও অভ্যন্তরের খালগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি দ্রুত সেগুলো খননের উদ্যোগ নেওয়া হোক।