২০১৯ সালে জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৭ সালে বিশ্বে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ মাদক। এর চেয়ে অনেক বেশি মাদকাসক্ত নানা ধরনের অসুস্থতা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মাদকপাচারের প্রধান দুটি আন্তর্জাতিক রুটের একটি রয়েছে বাংলাদেশে। ফলে বাংলাদেশেও মাদকের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে।
এর কিছু প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। গত মার্চে রাজধানীতে এক দিনে মাদক বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এক হাজার ৭০৬টি ইয়াবা বড়ি, ১৫২.৫ গ্রাম হেরোইন, চার কেজি ২০০ গ্রাম গাঁজা, পাঁচ বোতল দেশি মদ ও ৫৩ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। গত জুনের শেষার্ধে রাজধানীতে মাদক কারবারের অভিযোগে ৭০ জনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে এক হাজার ১৫৩টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ১১৯ কেজি ৪৩০ গ্রাম গাঁজা, ১১.৫ গ্রাম হেরোইন ও ৩৪ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। ২০২১ সালে সব সংস্থা মিলে তিন কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজার ইয়াবা জব্দ করেছে। ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে ১০ লাখ আট হাজার বোতল। প্রায় চার কেজি কোকেন ও ২১০ কেজি হেরোইন জব্দ করা হয়েছে। মাদকসংক্রান্ত ৪৭ শতাংশ মামলায় অপরাধীর সাজা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্পটে সক্রিয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মাদক কারবারিকে তারা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অন্তত তিন শতাধিক স্পটে নিয়মিত অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক কারবার চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক। মোট মাদকাসক্তের মধ্যে ৪৮ শতাংশ শিক্ষিত। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ আবার যৌন অপরাধী। জেলখানায় যত মানুষ আছে এর বেশির ভাগই মাদক পাচারকারী কিংবা কারবারি।
নতুন নতুন মাদকও আসছে নানা পথে। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসে ক্ষতিকর মাদক লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড। সংক্ষেপে মাদকটি এলএসডি নামে পরিচিতি। এলএসডি সাইকাডেলিক মাদক হিসেবে চিহ্নিত। এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। প্রকাশিত খবরে ‘স্কোপোলামিন’ নামে নতুন এক মাদকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ‘হেলুসিনেটিক’ মাদক। মাদক কারবারিরা এর নাম দিয়েছে ‘ডেভিলস ব্রেথ বা শয়তানের শ্বাস’। মূলত ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে এই মাদক শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যার প্রতিক্রিয়া থাকে প্রায় ২০ থেকে ৬০ মিনিট। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সাসহ জিনিসপত্র মাদক কারবারিরা ছিনিয়ে নেয়।
রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাড়ি, ক্লাব থেকে বস্তি পর্যন্ত সর্বত্রই জমজমাট মাদকের আড্ডা। ধরা পড়ছে নানা ধরনের মাদক। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে অবাধে ঢুকছে মাদক। মাদকের এমন অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশের সামনে এক ভয়ংকর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। যেকোনো মূল্যে মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে। মূল কারবারিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। মাদকাসক্ত চিহ্নিত করতে সব পর্যায়ে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি।