করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে গত রবিবার। টিকা নিয়ে নানামুখী গুজব ছিল। বিভ্রান্তি ছিল। ইচ্ছাকৃত অপপ্রচারও ছিল। তা সত্ত্বেও প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের উপস্থিতি যথেষ্ট ভালো ছিল। প্রথম দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি টিকা নেওয়ায় মানুষ অনেক বেশি আশ্বস্ত বোধ করেছে। এদিন টিকা নিয়েছেন প্রধান বিচারপতিসহ ৫৫ জন বিচারপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতি, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ ১০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য, মেয়র, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে সবচেয়ে বেশি টিকা নিয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ মনোনীত বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রথম দিন রাজধানীসহ সারা দেশে মোট ৩১ হাজার ১৬০ জন নাগরিক টিকা নিয়েছেন। অ্যাপে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়। ফলে অনেক কেন্দ্রেই আগে থেকে নিবন্ধন না করা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ কিছু কেন্দ্র থেকে এমন অনেককে টিকা না নিয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শনিবার দুপুর পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য নিজেদের নাম নিবন্ধন করিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম দিন এসএমএসের মাধ্যমে ডাকা হয়েছিল কম মানুষকে। দ্বিতীয় দিনে টিকা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রগুলোতে ভিড় ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। তার পরও প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। প্রথম দিন দেশে কেন্দ্র ছিল এক হাজার ১৫টি এবং এগুলোতে বুথ বা টিম ছিল দুই হাজার ৪০২টি। প্রতিটি বুথে দৈনিক ১৫০ জনকে টিকা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
তাতে দৈনিক সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। টিকা কার্যক্রমের সফলতার জন্য দৈনিক এর চেয়েও বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু প্রথম দুদিনের উপস্থিতি সেই তুলনায় যথেষ্ট কমই ছিল। তাই টিকা ব্যবস্থাপনা আরো সহজ ও সাবলীল করা প্রয়োজন। যে কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ ফিরে গেছে, সেই কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ যাতে ফিরে না যায় তার ব্যবস্থা কিভাবে করা যায়, সেটা ভেবে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিবন্ধনের বয়সসীমা ৫৫ বছর থেকে কমিয়ে ৪০ বছর করেছে। এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এতে টিকাদান কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি বাড়বে। বর্তমানে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা যেসব মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন, তাঁরা দ্বিধা কাটানোর জন্য আরো কিছুটা সময় পাবেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নিলেও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ এ সময় সংক্রমণ কম থাকায় ও টিকা কার্যক্রম চলায় মানুষের চলাচল ও সামাজিক মেলামেশা অনেক বেড়ে যাবে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়বে। অন্যদিকে টিকা নিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রচার কার্যক্রমে আরো বেশি জোর দিতে হবে।