অবশেষে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত টিকাদান কর্মসূচি। বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম টিকা নেন ওই হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। এরপর একে একে টিকা নেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মোট ২৬ জন। গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই টিকাদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার পাঁচটি হাসপাতালে প্রায় ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে মন্ত্রী-সচিবসহ সামরিক-বেসামরিক অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও রয়েছেন। দুই দিনে যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের কারো মধ্যেই গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানা যায়নি। তার পরও তাঁদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে গণটিকাদান কর্মসূচি।
করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বে টিকা সংগ্রহে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। অনেক দেশ এখনো একটিও টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি। সেখানে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ৭০ লাখের বেশি টিকা হাতে পেয়ে গেছে। এটি অনেক বড় সাফল্য। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরো তিন কোটি ডোজ টিকা আসবে। অন্যান্য উৎস থেকেও দ্রুত আরো কয়েক কোটি ডোজ টিকা চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, যত দ্রুত সম্ভব টিকা আনার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যত টাকা লাগে তা বরাদ্দ দিতে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছিলেন। কারণ দেশের মানুষকে রক্ষা করাটাই ছিল সরকারের প্রধান লক্ষ্য। শুধু টিকা আনাই নয়, অর্থনীতি সচল রাখতেও সরকার প্রণোদনা কর্মসূচিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও সরকারের এসব পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শিশু ও গর্ভবতী নারীদের টিকা কর্মসূচির বাইরে রাখা হবে। ফলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ১০ কোটি মানুষের জন্য টিকা সংগ্রহের প্রয়োজন হবে। এক বছরের মধ্যে আমরা হয়তো সে পরিমাণ টিকা সংগ্রহ করতে পারব। কিন্তু ১০ কোটি মানুষকে এই সময়ের মধ্যে আমরা টিকার আওতায় আনতে পারব কি? এটি এই মুহূর্তে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে কিছু মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার বিষয়ে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। তদুপরি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতাকর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে টিকা নিয়ে নানা ধরনের ভুল ও বিকৃত তথ্য দিচ্ছে, ভীতি ছড়াচ্ছে। এই অবস্থায় সবাইকে টিকা নিতে রাজি করানোটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারকে এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে, এই কর্মসূচি ততটাই সফল হবে।
টিকা কিনতে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। সেই টিকা বিনা মূল্যে মানুষকে দেওয়া হবে। উদ্দেশ্য ভাইরাস থেকে মুক্তি লাভ। তাই টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা যেমন সঠিক হওয়া প্রয়োজন, তেমনি টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।