একসময় হোয়াং হো নদীকে চীনের দুঃখ বলে অভিহিত করা হতো। চীন বহু আগে হোয়াং হো অববাহিকার জনগণের দুঃখ ঘুচিয়েছে। কিন্তু সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের কারণে কোটি কোটি টাকা খরচ করার পরও যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। প্রতিবছরই এখানকার কয়েক লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। কৃষি ও মৎস্য চাষের ওপর নির্ভরশীল এই এলাকার মানুষের জীবিকার পথও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই অঞ্চল। সেখানে ছোট-বড় ৫৪টি বিল আছে। এই অঞ্চলের পানি ওঠানামার পথ মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী। কিন্তু সব নদীই কমবেশি ভরাট হয়ে বিলের চেয়ে উঁচু হয়ে গেছে। তাই বর্ষায় নদীর পানি বিলে ঢুকে পড়ে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, গত চার বছরে ভবদহে খনন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এসব কাজের বড় অংশই করেছে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সাংসদ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ছেলে শুভ ভট্টাচার্যের প্রতিষ্ঠান। ভবদহ অঞ্চলের মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর পানি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৪টি প্রকল্পে সাড়ে ছয় কোটি টাকার পাইলট চ্যানেল খননকাজ হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর কোনো উপকার হয়নি।
নতুন করে ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’ নামের এই প্রকল্পে ৬২টি নদী ও খাল পুনঃখনন, খালের ওপর ১৯টি কালভার্ট নির্মাণ, বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ এবং ২০টি স্লুইসগেট নির্মাণ ও সংস্কারের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি জোয়ারাধার বা টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বাদ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, অতীতে জোয়ারাধার পদ্ধতি ব্যবহার করে জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব হয়েছিল। একটি স্বার্থান্বেষী মহল স্থানীয় জনগণের একাংশকে খেপিয়ে দিয়ে সেই পদ্ধতি বাতিল করে খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণভিত্তিক প্রকল্প হাতে নেয়। খনন করা খালে নতুন পানির সঙ্গে পলিও ঢুকে পড়ে। ফলে সেটি আবার ভরাট হয়ে যায়।
এই অবস্থায় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল এবং জলাবদ্ধ এলাকায় জোয়ারাধার বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। তাদের এই দাবি যৌক্তিক বলে মনে করি। অতীতে জোয়ারাধার নির্মাণ করে সুফল পাওয়া গেছে। অন্যদিকে খাল খনন, বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও কোনো কাজে আসেনি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো প্রকল্প নিতে পারে না। অতএব, স্থানীয় জনগণের দাবি মেনে অবিলম্বে প্রকল্প সংশোধন করা হোক।