আমরা কি কোনো সভ্য সমাজের বাসিন্দা? দেশে যেভাবে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে এমন সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গত মাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশ মর্মাহত হয়েছিল। এর রেশ কাটতে না কাটতেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে রাতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে স্বামীকে অন্য কক্ষে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। নির্যাতিতা নারীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসায় দুর্বৃত্তরা চলে যায়। এরপর নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওটি যারাই দেখেছে, তারাই লজ্জায়-ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক বিধবাকে ধর্ষণ করে কিছুসংখ্যক দুর্বৃত্ত। এমন ঘটনা একটি বা দুটি নয়, অজস্র। অত্যন্ত দুঃখজনক যে বেশির ভাগ ঘটনার সঙ্গেই ক্ষমতাসীন দল বা তার অঙ্গসংগঠনের লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
করোনা মহামারির মধ্যে ধর্ষণের এমন মহামারি কেন? নরপশুদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থী, গৃহবধূ, কর্মজীবী নারী, এমনকি শিশুরাও। সে কারণে করোনার ভয় উপেক্ষা করে দেশব্যাপী হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা ন্যক্কারজনক এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সমাজবিজ্ঞান ও অপরাধবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা এভাবে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার জন্য নানা রকম কারণকে দায়ী করলেও প্রধানত দায়ী করেছেন দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারাকে। বছর তিনেক আগের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এক দশকে দেশে পাঁচ হাজার ১১৭টি ধর্ষণের মামলা হলেও বিচার হয়েছে ৮৮১টির, সাজা হয়েছে মাত্র ১০১ জনের। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, তদন্তের গাফিলতি, তথ্য-প্রমাণের অভাব, সাক্ষ্য প্রদানে অনীহাসহ নানা রকম কারণে বেশির ভাগ অপরাধী খালাস পেয়ে যায়। এসব কারণে হাইকোর্ট ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলার বিচার আইনে নির্ধারিত ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইনসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরাধীরা যেভাবে ক্ষমতাসীন রাজনীতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তা বন্ধ করতে হবে। নোয়াখালীর ঘটনার মূল হোতা হিসেবে উল্লেখিত দেলোয়ার দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস করে আসছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাও আছে। ২০১৮ সালে অস্ত্রসহ ধরা পড়লেও কিছুদিনের মধ্যে ছাড়া পেয়ে যান। এখন ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই বলছেন, দেলোয়ার দলের কেউ নন। অথচ কিছুদিন আগেও দলের অনেকের সঙ্গেই তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। কাজেই সত্যকে অস্বীকার না করে দলকে কলঙ্কমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের সাত দফা নির্দেশনা মেনে দ্রুততম সময়ে ধর্ষণ মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন