গত মঙ্গলবার ঢাকায় সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মধ্য জ্যৈষ্ঠের এই তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর গ্রিন রোড, পান্থপথ, ধানমণ্ডি, তেজতুরীবাজার, বনানীর কিছু অংশ, মহাখালীর চেয়ারম্যানবাড়ি, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমে যায়। মঙ্গলবারের ভারি বৃষ্টিতে নগরবাসী আবার জলাবদ্ধতার অভিজ্ঞতা লাভ করল। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক রাস্তা গাড়ি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে কর্মজীবী ও অফিসগামী মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। অনেক জায়গায় যাত্রীছাউনি না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মানুষকে।
চিত্রটি অবশ্য একেবারে অচেনা নয়। প্রতিবছর বর্ষায় বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানী ঢাকা। এর জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনকে। সিটি করপোরেশন কিংবা ওয়াসা—শেষ পর্যন্ত জলাবদ্ধতার দায় কোনো সংস্থাই নেয় না। ওয়াসা বলে তাদের খাল পরিষ্কার; কিন্তু সিটি করপোরেশনের ড্রেন কাজ করে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, প্রতিবছর সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের নামে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি করে। প্রতিবছর শুনতে পাওয়া যায়, আগামী বছর থেকে জলাবদ্ধতা আর হবে না। প্রতিশ্রুতিই সার। জলাবদ্ধতা রাজধানীবাসীর নিয়তি। জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতেই হয়।
আর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ কাজের দোহাই দিয়ে যায়। কারো কোনো গাফিলতি নেই। ওয়াসার খাল ঠিক আছে, পাম্পিং স্টেশন ঠিক আছে; সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক আছে। গত ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসার কাছ থেকে খাল বুঝে পাওয়ার পর এ বছরের শুরুতেই ঢাকার দুই মেয়র ঘোষণা করেছিলেন, সামনের বর্ষায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতা হবে না। কথামতো তাঁরা খাল ও বক্স কালভার্টের ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কার, পাম্প চালু, খালের গভীরতা বাড়ানোসহ স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বলছে, এর মধ্যেই তারা স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার কাজ শেষ করেছে। কিন্তু রাস্তায় পানি জমল। জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাল মানুষ।
সমস্যার গোড়ায় হাত দিতে হবে। রাজধানীজুড়ে উন্নয়নকাজ চলছে। এখনো অনেক ড্রেন বন্ধ। মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ কিছু উন্নয়নকাজের জন্য এর আশপাশের ড্রেনগুলো বিচ্ছিন্ন হয়েছে। উন্নয়নকাজের কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে, এটা মেনে নিতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু এই অজুহাত কত দিন দেওয়া যাবে? সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করলে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেউ কেউ মনে করেন, সঠিক নগর পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। ঢাকাকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে চাই সমন্বিত পরিকল্পনা।