দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্বের জলবায়ু। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ক্রমেই বেশি করে গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। অনেক দেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী প্রজন্মের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অংশীদারির ভিত্তিতে সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করার জন্য বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত ‘জলবায়ু ও জ্বালানি বিষয়ে বড় অর্থনীতিগুলোর ফোরাম’ শীর্ষক সম্মেলনে রেকর্ডকৃত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই আহবান জানান। এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পথে গতকাল শনিবার তিনি ফিনল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে না পারলে মানবজাতির জন্য অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য তাঁরা অনেক দিন ধরেই কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর নির্গমন কমানোর কথা বলছেন। আর গ্রিনহাউস গ্যাসের বেশির ভাগই নির্গমন হয় উন্নত দেশগুলো থেকে। এর আগে বিভিন্ন ফোরামে উন্নত দেশগুলো কার্বন নির্গমন কমানোসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে সেসব প্রতিশ্রুতিও যথাযথভাবে রক্ষিত হচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটনে বাইডেন আয়োজিত সম্মেলনে বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।
এর মধ্যে আছে—১. বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার লক্ষ্যে কার্বন নির্গমনকারী প্রধান দেশগুলোকে তাদের কার্বন নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
২. জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলো বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করতে হবে এবং অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০ঃ৫০ অনুপাতে বিতরণ করতে হবে।
৩. উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি সবচেয়ে কার্যকর জ্বালানি সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
৪. নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জাতিরাষ্ট্রগুলোর সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোর হিসাব নেওয়া এবং তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লোকসান ও ক্ষতির দিকগুলো বিবেচনা করা উচিত।
৫. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা ও খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব সব দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া প্রয়োজন।
এবং ৬. আগামী নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ২৬ সম্মেলন থেকে দৃঢ় ও তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল পেতে বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
এখন এটি অনস্বীকার্য যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।
উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় চলে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, সমস্যা তত প্রকট হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর উচিত বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানো। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ছয় দফা প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।