এই দেশে নদীভাঙন ও বন্যা আকস্মিক কোনো বিষয় নয়, প্রাকৃতিক সমস্যা। নির্দিষ্ট বিরতিতে বানের পানির আধিক্য দেখা দিতে পারে। দেশের অনেক এলাকার মানুষ বন্যা ও বন্যাজনিত নদীভাঙনের হুমকিতে থাকে। আবার উন্নয়ন পরিকল্পনায় যদি প্রকৃতি ও প্রতিবেশগত ত্রুটি থেকে যায়, তাহলেও বন্যা ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকিও বাড়বে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের ৫ আগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনের ফল বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে বন্যা ও বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের তুলনায় বাংলাদেশে ২০১৫ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে।
মূলত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার প্রকোপ বেড়েছে। এই অববাহিকায় ২০০০ সাল নাগাদ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি, যা ২০১৫ সালে বেড়ে প্রায় ১৪ কোটিতে দাঁড়ায়। একই সময় বিশ্বে প্রায় ৫১ কোটি থেকে প্রায় ৮১ কোটি মানুষ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ২৫ থেকে ৩০ কোটি। এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে এবং আরো বাড়বে। বন্যার কারণ সম্পর্কে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, বরফ গলা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতিকে দায়ী করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাড়ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ক্রমেই বেশি করে গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে তার প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর ফলে যেমন মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, তেমনি বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।
বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলেও তার প্রভাব ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের ধরন। বাড়ছে বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ও তীব্রতা। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ বা ১৩ কোটির বেশি মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে নেমে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে হবে। শুধু বন্যা বা নদীভাঙন তো সমস্যা নয়, দেশে যে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে—এ সমস্যাটি নিয়েও ভাবতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্যা ও নদীভাঙনজনিত বিপর্যয় রোধে বাস্তব পরিকল্পনা নিতে হবে।